ঢাকা ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে চলে গেলেন লিভারপুল ও পর্তুগালের তারকা; বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া

হৃদয়বিদারক! ইউরো তারকা দিয়োগো জোটার সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু

diogo jota

ফুটবল বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়ে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গত ৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার প্রাণ হারালেন পর্তুগাল জাতীয় দল ও লিভারপুলের তারকা আক্রমণভাগের খেলোয়াড় দিয়োগো জোটা। তার ছোট ভাই আন্দ্রে সিলভাও একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে স্পেনের জামোরা শহরের এ-৫২ হাইওয়েতে। মাত্র ২৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় সম্প্রতি বিয়ে করেছেন এবং তিন সন্তানের জনক ছিলেন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দিয়োগো জোটা ও তার ভাই একটি ল্যাম্বোরগিনি গাড়িতে করে ইউরোপ ভ্রমণ করছিলেন। হঠাৎ গাড়ির একটি চাকা বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের গর্তে (ডিচে) পড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই গাড়িটিতে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, জোটা কিছুদিন আগে ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা তাকে বিমান ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি গাড়িতে করে পরিবারসহ ছুটিতে পর্তুগাল যাচ্ছিলেন।

এই মৃত্যু সবচেয়ে মর্মান্তিক কারণ দিয়োগো জোটা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা রুতে কার্দোজোকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের তিনটি ছোট ছোট সন্তান রয়েছে। একদিকে পেশাদার জীবনে ইউরো ২০২৪-এ দারুণ সাফল্য, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনে নতুন সংসার শুরু—জীবন যখন পূর্ণোদ্যমে এগোচ্ছিল, তখনই নিমিষে সবকিছু থেমে গেল।

সদ্য শেষ হওয়া ইউইএফএ ইউরো ২০২৪-এ দিয়োগো জোটা ছিলেন পর্তুগাল দলের অন্যতম স্তম্ভ। দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছালেও ট্রফি জিততে পারেনি। তবে গোল, অ্যাসিস্ট এবং নিরলস পরিশ্রম দিয়ে জোটা পুরো টুর্নামেন্টে নিজের কৃতিত্বের ছাপ রেখেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় দলে তার সামনে আরও অন্তত ৫-৬ বছর উজ্জ্বল ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছিল। ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপেও তার নেতৃত্ব আশা করা হচ্ছিল।

খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

লিভারপুল এফসি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে “অবিশ্বাস্য শোক” প্রকাশ করে জোটাকে “একজন অসাধারণ খেলোয়াড় এবং ব্যক্তি” বলে উল্লেখ করে।
“আমাদের পরিবার এক অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে,” জানায় পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশন (এফপিএফ)।
“পুরো ফুটবল পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা,” লিখেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা।
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, মোহামেদ সালাহ, লেব্রন জেমস থেকে শুরু করে ইয়ুর্গেন ক্লপ পর্যন্ত অসংখ্য তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় মর্মস্পর্শী শোকবার্তা জানিয়েছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হচ্ছে এবং খেলোয়াড়েরা কালো ব্যাজ পরছেন।

দিয়োগো জোটা (জন্ম: ৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৬) আধুনিক ফুটবলের অন্যতম প্রতিভাবান, পরিশ্রমী এবং প্রাণবন্ত আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার ঝড়ো গতি, গোল-সূক্ষ্মবোধ এবং সর্বদা হাসিমুখে থাকার স্বভাব তাকে কোটি ভক্তের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছিল।

তার চলে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকে একটু দরিদ্রতর করে দিল। কিন্তু অ্যানফিল্ডে, ড্রাগাও স্টেডিয়ামে এবং কোটি ভক্তের স্মৃতিতে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টি করা অসাধারণ সব মুহূর্তের মধ্য দিয়ে।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কটুক্তির প্রতিবাদে শেরপুরে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে চলে গেলেন লিভারপুল ও পর্তুগালের তারকা; বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া

হৃদয়বিদারক! ইউরো তারকা দিয়োগো জোটার সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু

আপডেট সময় ০৪:৩২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

ফুটবল বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়ে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গত ৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার প্রাণ হারালেন পর্তুগাল জাতীয় দল ও লিভারপুলের তারকা আক্রমণভাগের খেলোয়াড় দিয়োগো জোটা। তার ছোট ভাই আন্দ্রে সিলভাও একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে স্পেনের জামোরা শহরের এ-৫২ হাইওয়েতে। মাত্র ২৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় সম্প্রতি বিয়ে করেছেন এবং তিন সন্তানের জনক ছিলেন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দিয়োগো জোটা ও তার ভাই একটি ল্যাম্বোরগিনি গাড়িতে করে ইউরোপ ভ্রমণ করছিলেন। হঠাৎ গাড়ির একটি চাকা বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের গর্তে (ডিচে) পড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই গাড়িটিতে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, জোটা কিছুদিন আগে ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা তাকে বিমান ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি গাড়িতে করে পরিবারসহ ছুটিতে পর্তুগাল যাচ্ছিলেন।

এই মৃত্যু সবচেয়ে মর্মান্তিক কারণ দিয়োগো জোটা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা রুতে কার্দোজোকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের তিনটি ছোট ছোট সন্তান রয়েছে। একদিকে পেশাদার জীবনে ইউরো ২০২৪-এ দারুণ সাফল্য, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনে নতুন সংসার শুরু—জীবন যখন পূর্ণোদ্যমে এগোচ্ছিল, তখনই নিমিষে সবকিছু থেমে গেল।

সদ্য শেষ হওয়া ইউইএফএ ইউরো ২০২৪-এ দিয়োগো জোটা ছিলেন পর্তুগাল দলের অন্যতম স্তম্ভ। দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছালেও ট্রফি জিততে পারেনি। তবে গোল, অ্যাসিস্ট এবং নিরলস পরিশ্রম দিয়ে জোটা পুরো টুর্নামেন্টে নিজের কৃতিত্বের ছাপ রেখেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় দলে তার সামনে আরও অন্তত ৫-৬ বছর উজ্জ্বল ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছিল। ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপেও তার নেতৃত্ব আশা করা হচ্ছিল।

খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

লিভারপুল এফসি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে “অবিশ্বাস্য শোক” প্রকাশ করে জোটাকে “একজন অসাধারণ খেলোয়াড় এবং ব্যক্তি” বলে উল্লেখ করে।
“আমাদের পরিবার এক অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে,” জানায় পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশন (এফপিএফ)।
“পুরো ফুটবল পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা,” লিখেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা।
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, মোহামেদ সালাহ, লেব্রন জেমস থেকে শুরু করে ইয়ুর্গেন ক্লপ পর্যন্ত অসংখ্য তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় মর্মস্পর্শী শোকবার্তা জানিয়েছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হচ্ছে এবং খেলোয়াড়েরা কালো ব্যাজ পরছেন।

দিয়োগো জোটা (জন্ম: ৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৬) আধুনিক ফুটবলের অন্যতম প্রতিভাবান, পরিশ্রমী এবং প্রাণবন্ত আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার ঝড়ো গতি, গোল-সূক্ষ্মবোধ এবং সর্বদা হাসিমুখে থাকার স্বভাব তাকে কোটি ভক্তের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছিল।

তার চলে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকে একটু দরিদ্রতর করে দিল। কিন্তু অ্যানফিল্ডে, ড্রাগাও স্টেডিয়ামে এবং কোটি ভক্তের স্মৃতিতে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টি করা অসাধারণ সব মুহূর্তের মধ্য দিয়ে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471