ঢাকা ১১:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবন খুলছে আজ অপরাধ ঠেকাতে টহল জোরদার করেছে বন বিভাগ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৪৪:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

এইচ এম লিটন,কয়রা(খুলনা)ঃ টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পহেলা সেপ্টম্বর থেকে জেলে-বাওয়ালী ও পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনের দুয়ার খুলে দেয়া হচ্ছে। এবার বনের উপর নির্ভরশীল জেলেরা বনে প্রবেশ করে নিবিঘ্নে মাছ- ও কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন। কিন্তু সুন্দর বনে অবৈধ অনুপ্রবেশ সহ বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্যপ্রাণী হত্যা সহ বিভিন্ন অপকর্ম ঠেকাতে টহল জোরদার করেছে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কাশিয়াবাদ স্টেশন সহ বনের ভেতর ক্যাম্পোর বন প্রহরীরা ।জানা গেছে, সুন্দরবনের বন্য প্রানী নদী -খালের মাছের বিচরন ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর পহেলা জুন থেকে বনে সব ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ। যে কারণে সুন্দরবনে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩ মাসের জন্য মাছ-কাঁকড়া ধরা ও সকল ধরনের পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ রাখে বন বিভাগ।ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এ ছাড়া আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী , ১২ হাজার নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) আছে। সে হিসাবে প্রতিটি রেঞ্জে ৩ হাজারের মতো বিএলসি (অনুমতিপত্রধারী)জেলে নৌকা আছে।সুন্দরবনের বানিয়াখালী, কাশিয়াবাদ, নলিয়ান, কালাবগি স্টেশনসহ খুলনা রেঞ্জের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (বিএলসি) আছে। দীর্ঘ ৯২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে পারমিট নিয়ে বৈধ ভাবে বনে প্রবেশ করবেন জেলেরা।কয়রার মৎস ব্যবসায়ী শেখ নুরুল হুদা বলেন,এলাকায বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে ও মৎস্যজীবীদের তিন মাস না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগ থেকে পারমিট (পাস) নিয়ে ছুটে যাবেন সুন্দরবনে। এখন তাঁদের শুধু অপেক্ষার পালা। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় আগের মতো দুই মাস করার দাবি তাঁদের। কয়রার শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী ৫নং কয়রা গ্রামে জেলে আলতাফ হোসেন সহ কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় তারা খুব কষ্টে ছিলেন। সুন্দরবনে মাছ ধরতে না পারায় পরিবার নিয়ে ধার দেনা করে দিন পার করতে হয়েছিল । এখন তারা সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে পারবেন। এতে কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।তিনি আরও বলেন, বছরে সুন্দরবন গড়ে পাঁচ মাস বন্ধ থাকে, দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হিসেবে আর বাকি তিন মাস মাছে ও পশুপাখির প্রজনন মৌসুম হিসাবে।এ নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে ২মাস করার দাবি তাদের।বনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন , বন্ধের সময় ছেলে -মেয়ে’ স্ত্রী পরিবার নিয়ে দিনগুলো বড্ড কষ্টে পার করতে হয়।আর এলাকয় তেমন কর্মসংস্থান নাই সরাদিন দিন মুজরী খেটে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।তিনি আরও বলেন, তাদের জন্য মৎস বিভাগ থেকে সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।নিষিদ্ধ সময়ে সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তাদের। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেড এম হাছানুর রহমান বলেন, তিন মাস নিষেধাজ্ঞার পর সোমবার ১ সেপ্টম্বর থেকে পর্যটক ও জেলেদের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পত্র (পাশ) দেওয়া শুরু হবে । ইতিমধ্যে সব ষ্টেশন গুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনে পারমিট নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ তাই অবৈধভাবে কেউ যাতে অনুপ্রবেশ না করতে পারে এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিরাপত্তায় টহল জোরদার করেছি। এবং বনের পূর্ব ঘোষিত অভ্যয়ারণ্য এলাকায় আগের মতো প্রবেশ নিষিদ্ধ বহাল থাকবে বলে তিনি জানান ।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন। “সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ — ওসি না সরালে দুর্বার আন্দোলন”

সুন্দরবন খুলছে আজ অপরাধ ঠেকাতে টহল জোরদার করেছে বন বিভাগ

আপডেট সময় ০৭:৪৪:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এইচ এম লিটন,কয়রা(খুলনা)ঃ টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পহেলা সেপ্টম্বর থেকে জেলে-বাওয়ালী ও পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনের দুয়ার খুলে দেয়া হচ্ছে। এবার বনের উপর নির্ভরশীল জেলেরা বনে প্রবেশ করে নিবিঘ্নে মাছ- ও কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন। কিন্তু সুন্দর বনে অবৈধ অনুপ্রবেশ সহ বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্যপ্রাণী হত্যা সহ বিভিন্ন অপকর্ম ঠেকাতে টহল জোরদার করেছে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কাশিয়াবাদ স্টেশন সহ বনের ভেতর ক্যাম্পোর বন প্রহরীরা ।জানা গেছে, সুন্দরবনের বন্য প্রানী নদী -খালের মাছের বিচরন ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর পহেলা জুন থেকে বনে সব ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ। যে কারণে সুন্দরবনে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩ মাসের জন্য মাছ-কাঁকড়া ধরা ও সকল ধরনের পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ রাখে বন বিভাগ।ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এ ছাড়া আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী , ১২ হাজার নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) আছে। সে হিসাবে প্রতিটি রেঞ্জে ৩ হাজারের মতো বিএলসি (অনুমতিপত্রধারী)জেলে নৌকা আছে।সুন্দরবনের বানিয়াখালী, কাশিয়াবাদ, নলিয়ান, কালাবগি স্টেশনসহ খুলনা রেঞ্জের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (বিএলসি) আছে। দীর্ঘ ৯২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে পারমিট নিয়ে বৈধ ভাবে বনে প্রবেশ করবেন জেলেরা।কয়রার মৎস ব্যবসায়ী শেখ নুরুল হুদা বলেন,এলাকায বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে ও মৎস্যজীবীদের তিন মাস না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগ থেকে পারমিট (পাস) নিয়ে ছুটে যাবেন সুন্দরবনে। এখন তাঁদের শুধু অপেক্ষার পালা। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় আগের মতো দুই মাস করার দাবি তাঁদের। কয়রার শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী ৫নং কয়রা গ্রামে জেলে আলতাফ হোসেন সহ কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় তারা খুব কষ্টে ছিলেন। সুন্দরবনে মাছ ধরতে না পারায় পরিবার নিয়ে ধার দেনা করে দিন পার করতে হয়েছিল । এখন তারা সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে পারবেন। এতে কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।তিনি আরও বলেন, বছরে সুন্দরবন গড়ে পাঁচ মাস বন্ধ থাকে, দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হিসেবে আর বাকি তিন মাস মাছে ও পশুপাখির প্রজনন মৌসুম হিসাবে।এ নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে ২মাস করার দাবি তাদের।বনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন , বন্ধের সময় ছেলে -মেয়ে’ স্ত্রী পরিবার নিয়ে দিনগুলো বড্ড কষ্টে পার করতে হয়।আর এলাকয় তেমন কর্মসংস্থান নাই সরাদিন দিন মুজরী খেটে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।তিনি আরও বলেন, তাদের জন্য মৎস বিভাগ থেকে সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।নিষিদ্ধ সময়ে সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তাদের। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেড এম হাছানুর রহমান বলেন, তিন মাস নিষেধাজ্ঞার পর সোমবার ১ সেপ্টম্বর থেকে পর্যটক ও জেলেদের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পত্র (পাশ) দেওয়া শুরু হবে । ইতিমধ্যে সব ষ্টেশন গুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনে পারমিট নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ তাই অবৈধভাবে কেউ যাতে অনুপ্রবেশ না করতে পারে এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিরাপত্তায় টহল জোরদার করেছি। এবং বনের পূর্ব ঘোষিত অভ্যয়ারণ্য এলাকায় আগের মতো প্রবেশ নিষিদ্ধ বহাল থাকবে বলে তিনি জানান ।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471