জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দল। তবে এ দাবির সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি একমত না হওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
কিছুটা থমকে গিয়েছিল দাবির বিষয়টি। তবে নতুন করে দাবিটি জোরদার করছে তারা। এরই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার দলীয় এক কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানান জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। একই দিন দলটির আরেক শীর্ষ নেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলও একই দাবি জানান।
এর দুদিন আগে এক সংলাপে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদ। গত শনিবার এক সমাবেশে একই দাবি জানান ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় নির্বাচনের দাবির পক্ষে সংশ্লিষ্ট দলগুলো অনড় অবস্থানে রয়েছে। এ দাবি আরো জোরদার করা হবে। কারণ দলীয় সরকারের অধীন স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে তারা আস্থা রাখতে পারছে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও ভূমিকা যাচাইয়ের জন্যই এ নির্বাচন জরুরি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় শূন্যতা বিরাজ করছে। ওই শূন্যতা পূরণের জন্যও দ্রুত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন। স্থানীয় জনপ্রনিধিদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি প্রস্তাব আছে। এটি কার্যকর হওয়ার আগে বর্তমান সরকারের অধীন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা দরকার।
সূত্রমতে, শুধু স্থানীয় নির্বাচনই নয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পতিত ফ্যাসিবাদে জড়িতদের বিচার শুরু করারও দাবি জোরদার করবে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা বেশকিছু দল। পাশাপাশি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতি চায় তারা।
স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন জাতিকে উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার কথা বলছে। আমার তাদের এসিড টেস্ট দেখতে চাই। আমরা তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, স্থানীয় সরকার না থাকার কারণে জাতি নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিন। স্থানীয় নির্বাচনের এসিড টেস্টের মাধ্যমে আপনাদের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছা দেখতে চাই। আপনাদের কাজে সন্তুষ্ট হলে জনগণ আপনাদের সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে যাবে। আর যদি তার ব্যত্যয় ঘটে, তবে জনগণ আপনাদের লাল কার্ড দেখাবে। কোনো দল বা গোষ্ঠীকে বিশেষ কোনো সুবিধা দেওয়া হলে তা আমরা কিছুতেই মানব না। আমরা ১৮ কোটি মানুষকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে।
একই সঙ্গে বিচার ও সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর বলেন, যারা গণহত্যা সংঘটিত করেছে তাদের আইনের বাইরে রাখবেন না। তাদের বিচার নিশ্চিত করুন। তাদের বিচার দৃশ্যমান করুন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করতে পর্যাপ্ত সংস্কার করুন। কালো টাকা ও পেশিশক্তি থেকে বের হয়ে এসে সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সমানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের পাশাপাশি আগামী জুনের মধ্যেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন শেষ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
নতুন করে স্থানীয় নির্বাচন দাবি জোরদার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আমার দেশকে বলেন, এটা আমাদের পুরোনো দাবি। তবে নতুন করে এ দাবি জোরদার করা হচ্ছে। একই ধরনের মন্তব্য করেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল।
সংস্কার ও স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শনিবার রাজধানীতে এক সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। সংস্কারের আগে গুন্ডামি মার্কা নির্বাচন জনগণ সহ্য করবে না। জনতাকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগে সংস্কার, পরে নির্বাচনÑ এ দাবিতে অচিরেই ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচি আসছে।
ফয়জুল করীম আরো বলেন, ইসির সক্ষমতা যাচাইয়ে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। এ দাবি এখন অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের। একক কোনো দলকে সরকার বিশেষ কোনো সুবিধা দিলে তা দেশের জনগণ বরদাশত করবে না। বিশেষ কোনো দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়নি। হাজারো শহীদের রক্ত আর হাত-পা ও চোখ হারানো পঙ্গুত্ববরণকারীদের সঙ্গে বেঈমানি করলে পরিণতি শুভ হবে না।
এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী দলীয় সরকার এলে স্থানীয় নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের জেতাবে। তাই আমরা আগে স্থানীয় নির্বাচন চাই। একই ভাবে সংস্কার পাশ কাটিয়ে জাতীয় নির্বাচন আমরা মানব না। আমরা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন চাই। জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদও একই দাবি জানাচ্ছে। এনসিপিও আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়। শুধু বিএনপি ও তাদের ঘরানার কিছু দল এটা চাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকার যদি বিএনপির কথায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা হার্ডলাইনে যাব।
সূত্রমতে, গত বুধবার ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ নেতাদের সংলাপে ছয় বিষয়ে একমত হন। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং ফ্যাসিস্ট ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের বিষয় রয়েছে।
একই দিন চারটি ইসলামী দলÑ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সেখানেও ফ্যাসিস্টের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনসহ পাঁচ বিষয়ে একমত হয় দলগুলো।
ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম জানান, তাদের সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটসহ আরো কিছু দলের সংলাপ-সমঝোতার সম্ভাবনা আছে।