ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পাওনা টাকা আদায়ে মৃতদেহ দাফনে বাধা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে উপজেলায় পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মো. হুমায়ুন কবির (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর লাশ দাফনে বাধা প্রদান করেন পাওনাদারেরা। প্রায় ১২ ঘণ্টা লাশের কফিন অবরুদ্ধ করে রাখেন পাওনাদারেরা। পরে থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় পাওনা আদায়ে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর লাশ দাফনে অনুমতি দেন পাওনাদারেরা।

উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জয়শ্রী এলাকায় বুধবার (২১ মে ২০২৫) এ ঘটনা ঘটে। ৩ সন্তানের জনক মো. হুমায়ুন কবির ওই গ্রামের আবুল হোসেন শেখ ও রহিমেন্নেছা দাম্পতির ছেলে। এর আগে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২০মে ২০২৫) সকালে তিনি মারা যান।
মৃতের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী স্থানীয় শাহী বাজার এলাকায় বহুমুখী ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ২৫ থেকে ৩০ টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। গত ৭ বছর পূর্বে আমার মেয়ে আসমা আক্তার মিলি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার চিকিৎসার জন্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয় আমাদের। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে ও আমাদের মেয়ের চিকিৎসা খরচের জন্যে বিভিন্ন স্বজন ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করেন আমার স্বামী। পরবর্তিতে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। আমার স্বামী মাঠে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু তখন করোনার অজুহাত দেখিয়ে কেউ টাকা দিচ্ছিলো না। এদিকে আমার থেকে স্বামী পাওনাদাররা ও এনজিও কর্মীরা টাকার জন্যে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। উপায়ন্তর না পেয়ে আমার স্বামী গত ৪ বছর পূর্বে বিদেশে মাধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই চলে যেতে বাধ্য হয়। সেখানেও ভালো কিছু করতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ক’মাস পূর্বে দেশে চলে আসলে আমরা ঢাকাতে বসবাস করতে শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, সোমবার (১৯ মে ২০২৫) বিকেলে আমার স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ আমার স্বামী মারা যান। রাতেই স্বামীর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে পাওনাদারদের বাধার মুখে পড়তে হয়। আমার স্বামী ১ কোটি টাকার মতো দেনা থাকলেও তার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার মতো পাওনা রয়েছেন। সকলের সহযোগিতায় আমাদের টাকাগুলো উত্তোলন করতে পারলে আমার স্বামীর দেনাগুলো আমরা পরিশোধ করতে পারবো ও শিশু সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো। অন্যথায় মরণ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
পাওনাদার রুবেল, বাদশা মিয়া, জসিমসহ আরো অনেকেই বলেন, মো. হুমায়ুন কবির আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর দেয় নি। সে গত ৫ বছরের মতো পালিয়ে বেড়িয়েছে। তাই আজকে তার মরদেহ দাফনে আমরা বাধা দিচ্ছি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই মো. দেলোয়ার হো বলেন, পাওনাদারদের আপত্তির মুখে মো. হুমায়ুন কবিরের মরদেহ দাফনে বিলম্ব হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। পরে তার স্ত্রী টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে মরদেহ দাফনের জন্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এবং খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

সরকারি সিটি কলেজ,চট্টগ্রামে ছাত্রদল ও বৈষম্য বিরোধীর কর্মীসহ পাঁচজনকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পাওনা টাকা আদায়ে মৃতদেহ দাফনে বাধা

আপডেট সময় ০৭:৫১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে উপজেলায় পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মো. হুমায়ুন কবির (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর লাশ দাফনে বাধা প্রদান করেন পাওনাদারেরা। প্রায় ১২ ঘণ্টা লাশের কফিন অবরুদ্ধ করে রাখেন পাওনাদারেরা। পরে থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় পাওনা আদায়ে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর লাশ দাফনে অনুমতি দেন পাওনাদারেরা।

উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জয়শ্রী এলাকায় বুধবার (২১ মে ২০২৫) এ ঘটনা ঘটে। ৩ সন্তানের জনক মো. হুমায়ুন কবির ওই গ্রামের আবুল হোসেন শেখ ও রহিমেন্নেছা দাম্পতির ছেলে। এর আগে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২০মে ২০২৫) সকালে তিনি মারা যান।
মৃতের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী স্থানীয় শাহী বাজার এলাকায় বহুমুখী ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ২৫ থেকে ৩০ টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। গত ৭ বছর পূর্বে আমার মেয়ে আসমা আক্তার মিলি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার চিকিৎসার জন্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয় আমাদের। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে ও আমাদের মেয়ের চিকিৎসা খরচের জন্যে বিভিন্ন স্বজন ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করেন আমার স্বামী। পরবর্তিতে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। আমার স্বামী মাঠে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু তখন করোনার অজুহাত দেখিয়ে কেউ টাকা দিচ্ছিলো না। এদিকে আমার থেকে স্বামী পাওনাদাররা ও এনজিও কর্মীরা টাকার জন্যে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। উপায়ন্তর না পেয়ে আমার স্বামী গত ৪ বছর পূর্বে বিদেশে মাধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই চলে যেতে বাধ্য হয়। সেখানেও ভালো কিছু করতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ক’মাস পূর্বে দেশে চলে আসলে আমরা ঢাকাতে বসবাস করতে শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, সোমবার (১৯ মে ২০২৫) বিকেলে আমার স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ আমার স্বামী মারা যান। রাতেই স্বামীর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে পাওনাদারদের বাধার মুখে পড়তে হয়। আমার স্বামী ১ কোটি টাকার মতো দেনা থাকলেও তার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার মতো পাওনা রয়েছেন। সকলের সহযোগিতায় আমাদের টাকাগুলো উত্তোলন করতে পারলে আমার স্বামীর দেনাগুলো আমরা পরিশোধ করতে পারবো ও শিশু সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো। অন্যথায় মরণ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
পাওনাদার রুবেল, বাদশা মিয়া, জসিমসহ আরো অনেকেই বলেন, মো. হুমায়ুন কবির আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর দেয় নি। সে গত ৫ বছরের মতো পালিয়ে বেড়িয়েছে। তাই আজকে তার মরদেহ দাফনে আমরা বাধা দিচ্ছি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই মো. দেলোয়ার হো বলেন, পাওনাদারদের আপত্তির মুখে মো. হুমায়ুন কবিরের মরদেহ দাফনে বিলম্ব হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। পরে তার স্ত্রী টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে মরদেহ দাফনের জন্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এবং খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471