ঈদুল আযহার ১৯৮তম জামাতের জন্য প্রস্তুত উপমহাদেশের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়া ময়দান। আগামী ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। এবার জামাতে ইমামতি করবেন কিশোরগঞ্জ শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন হয়বতনগর এ. ইউ. কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই।
আজ বুধবার ৪ জুন বেলা ১০ টায় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন শেষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।
তিনি জানান, মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত অজুর পানি, সুপেয় পানি, ওয়াশরুম এবং মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠে থাকবে ফায়ার সার্ভিসের দল, নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে পর্যাপ্ত সিসিটিভি এবং ওয়াচ-টাওয়ার। মাঠে নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকবেন পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্য এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে চলবে দুটি বিশেষ ট্রেন – ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’। একটির রুট ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব এবং অপরটি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মোহা. কাজেম উদ্দীন জানান, জামাত উপলক্ষে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর, চেকপোস্ট, ড্রোন ক্যামেরা ও বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। আশপাশের স্থাপনাগুলোকেও নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে।
র্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মো. আশরাফুল কবির জানান, মাঠে ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় র্যাব সদস্যদের টহল থাকবে। গেটে মোতায়েন থাকবে পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য। থাকবে স্নাইপার রাইফেল ও প্যাট্রোল কার। ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনেও মোতায়েন থাকবে র্যাব সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। আহত হন আরও ১৬ জন। এরপরও থেমে যায়নি এই ঈদগাহের ঐতিহ্যবাহী জামাত।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, বারো ভূঁইয়া নেতা ঈশা খাঁর বংশধর শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ একবার ঈদের মোনাজাতে ‘সোয়া লাখ’ মুসল্লির সমাগম কামনা করেন। এক সময় সেখানে সোয়া লাখ মুসল্লি একত্রিত হওয়ায় এর নাম হয়ে যায় ‘শোলাকিয়া’। ১৯৫০ সালে ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ ঈদগাহ মাঠের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াকফ করেন। বর্তমানে এখানে ২৬৫টি কাতারে একসাথে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মুসল্লির উপস্থিতির দিক থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান আজও উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।