ঢাকা ০১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গতকালের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন।

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:০০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

মোঃ আবু তৈয়ব, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, ( প্রতিনিধি) :
গতকালের ঘটনায় দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য-

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী আল-জমিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদ্রাসা) পবিত্র কুরআন-হাদীস, ইসলামী আইন ও সুন্নাহর শিক্ষা পরিচালনার পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুনের অনুশীলন এবং প্রচার-প্রসারের প্রাণকেন্দ্র। যে কারণে এই প্রতিষ্ঠানকে উম্মুল মাদারিস তথা মাদ্রাসাসমূহের জননী বলা হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও তথাকথিত উচ্চাকাঙ্খী মনোভাব পোষণ না করে খালেস দ্বীনি শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত আছেন হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। যাবতীয় অনাচার, বিভ্রান্তি, গোমরাহী, কুসংস্কার, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও শিরক-বিদআত থেকে জাতিকে মুক্ত করে একটি আদর্শবান মহান জাতি গঠনে অনুপম স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন অত্র মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট সকলেই।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

আমরা গভীর হতাশা ও দুঃখের সাথে গতকালকের সংঘটিত ঘটনাটি আপনাদেরকে অবগত করছি যে, গতকালের উস্কানী ও হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালের দিন সুন্নি নামধারী বিদআতপন্থীরা হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে এসে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। সেজন্য এবছর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে ছাত্রদের উদ্দেশে মসজিদে ঘোষণা দেয় যে, ১২ই রবিউল আউয়াল শনিবার ফজরের পর থেকে ইশা পর্যন্ত মাদ্রাসার গেইট বন্ধ থাকবে। এমনকি মাদ্রাসার ভবনগুলোর ছাদের সিঁড়িঘরে প্রবেশের গেটসমূহও তালাবন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে এতোটা গুরুত্ব দেওয়ার আরো একটি কারণ হলো, পরদিন (১৩ই রবিউল আউয়াল) থেকে মাদ্রাসা পরীক্ষা শুরু। যাতে কোনভাবেই স্বাভাবিক পরিবেশের বিঘ্ন না ঘটে। আগে থেকেই উস্তাদদের নির্দেশ এবং হুশিয়ারি থাকায়, ছাত্ররা মানসিকভাবেও সেদিন মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া যাবে না সেরকম প্রস্তুতি হিসেবে প্রযোজনী খাবার, খাতা-কলম, ইত্যাদি আগে থেকেই সংগ্রহ করে নিয়েছিলো।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ভোর থেকেই মাদ্রাসার সকল গেট বন্ধ করে দিয়ে গেটে গেটে কড়া পাহারা বসানো হয় এবং মাদ্রাসার কোন ছাত্রকে বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। এতে আমাদের আশা ছিল, কথিত নামধারী সুন্নীরাও সংযত থেকে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা এরিয়া অতিক্রম করবে। তাছাড়া, আমরা হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনকেও অবগত করেছিলাম, যাতে অন্যান্য বছরের মতো হাটহাজারী মাদ্রাসা এরিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে জুলুসযাত্রীদেরকে মাইকে বাদ্য-বাজনা করতে নিষেধ করে।

কিন্তু ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের নামধারী সুন্নীরা চট্টগ্রাম মহানগরীতে কথিত ঈদে মিলাদুন্নবী ও জলুস উদযাপনের লক্ষে গতকাল সকাল ৭টা থেকে শত শত গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে বিকট শব্দে মাইকে গান-বাজনা, উস্কানীমূলক স্লোগান, অশ্লীল নৃত্য ও কটুক্তিমূলক আচরণ এবং দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে উস্কানী দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। এই সময়ে তারা শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও কাষেদে মিল্লাত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রাহ.) এর কবরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, যেখানে বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। এছাড়া তারা জামিয়ার শতবর্ষী বাইতুল কারীম জামে মসজিদের দিকে অশালীন ভঙ্গিমায় ইশারা করার মত ধৃষ্টতা দেখায়। এমনকি মজিদের আযান এবং জামাআত চলাকালীন সময়েও তাদের বাদ্য-বাজনা ও স্লোগান সমানতালে জারি রাখে।

তাদের উস্কানীর মাত্রা বাড়তে থাকলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থেকে বারংবার অনুরোধ করা হলে দুপুরের পর ২/৩ জায়গায় কিছু পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তারা উস্কানী বন্ধে সমর্থ হয়নি।
উল্লেখ্য, ইশার নামাযের আগে যখন জুলুসের একাধিক গাড়ি থেকে পথচারীদেরকে উদ্যেশ্য করে ওহাবী ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করার চেষ্টা করে, তখন আশেপাশের পথচারীরা তাদের এসব উস্কানীর কড়া প্রতিবাদ করে জানায় যে, তোমরা বিশৃঙ্খলা করতে চাও কেন, তখন পর্যন্তও মাদ্রাসার গেট সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

শত উস্কানী সত্ত্বেও পূর্ব ঘোষণামতে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মাদ্রাসার সকল গেট বন্ধ ছিল, এ সময়ে কোন ছাত্র বাইরে বের হয়নি এবং সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে। কিন্তু আমাদের সকল সংযম ও ধৈর্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতের বেলায় হাটহাজারী বাজারের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় বাজার ও ওষধ ক্রয় করতে যাওয়া ছাত্রদের উপর তারা দেশিয় বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে শতাধিক ছাত্রকে মারাত্মক আহত ও জখম করে। অনেক দোকানপাটে ভাংচুর চালায় এবং নগদ টাকাসহ দ্রব্যসামগ্রী লুটপাট করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আহত বহু ছাত্র এখনো চিকিৎসাধীন। পরীক্ষার জন্য মাদ্রাসায় আসার পথে কিছু ছাত্রের উপরও তারা হামলা চালায় এবং মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগসহ আসবাবপত্র কেড়ে নেয়।

রাত আনুমানিক একটার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমান হাটহাজারী মাদরাসার অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, হাটহাজারী মাদরাসার কোনো ছাত্র গতকালের ঘটনায় নিহত হননি। তবে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশজন ছাত্র এখনো গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।

আমরা আপনাদের মাধ্যমে গতকালকের পুরো ঘটনা দেশবাসীকে জানাতে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি। একই সাথে গতকাল শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে উস্কানী, মসজিদ অবমাননা, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর কবরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর সশস্ত্র হামলা, দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সাথে কথিত সুন্নী নামের বিদআতপন্থীদের যারা ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়াতে উস্কানীমূলক পোস্ট দিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তেজনামুখর করেছে, তাদের গ্রেফতার দাবি করছি।

হাটহাজারী মাদ্রাসার বায়তুল করীম জামে মসজিদের প্রতি অশ্লিল ইঙ্গিত ও উক্তিকারী ফটিকছড়ির আরিয়ান রায়হানের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। একই সাথে সরকারকে গতকালকের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আহত মাদ্রাসা ছাত্রদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।

রবীউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মতো গতকাল প্রশাসনিক যথাযথ উদ্যোগে গাফলতি এবং রাতের অন্ধকারে ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের প্রতিহত করতে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার ঘটনাকে পূর্ণ তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনরি দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে আগামীতে রবীউল আউয়ালের কথিত জুলুস, উরশসহ মাজারের কোন গাড়ি যাতে মাদ্রাসা এরিয়াতে যাতে গান-বাজনা ও স্লোগান দিতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাই।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা!

আমরা আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইদের সাথে মিলিত হয়েছি গতকাল সংঘটিত এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা সম্পর্কে আপনাদেরকে অবগত করতে, যাতে জাতির সামনে সঠিক ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। একই সাথে এই ঘটনায় দায়ীদেরকে যাতে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হয় সেই দাবি তুলে ধরছি।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় ট্রাক চালক ইয়ার পিস্তল সহ আটক- ০২

গতকালের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন।

আপডেট সময় ০৮:০০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোঃ আবু তৈয়ব, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, ( প্রতিনিধি) :
গতকালের ঘটনায় দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য-

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী আল-জমিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদ্রাসা) পবিত্র কুরআন-হাদীস, ইসলামী আইন ও সুন্নাহর শিক্ষা পরিচালনার পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুনের অনুশীলন এবং প্রচার-প্রসারের প্রাণকেন্দ্র। যে কারণে এই প্রতিষ্ঠানকে উম্মুল মাদারিস তথা মাদ্রাসাসমূহের জননী বলা হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও তথাকথিত উচ্চাকাঙ্খী মনোভাব পোষণ না করে খালেস দ্বীনি শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত আছেন হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। যাবতীয় অনাচার, বিভ্রান্তি, গোমরাহী, কুসংস্কার, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও শিরক-বিদআত থেকে জাতিকে মুক্ত করে একটি আদর্শবান মহান জাতি গঠনে অনুপম স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন অত্র মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট সকলেই।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

আমরা গভীর হতাশা ও দুঃখের সাথে গতকালকের সংঘটিত ঘটনাটি আপনাদেরকে অবগত করছি যে, গতকালের উস্কানী ও হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালের দিন সুন্নি নামধারী বিদআতপন্থীরা হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে এসে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। সেজন্য এবছর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে ছাত্রদের উদ্দেশে মসজিদে ঘোষণা দেয় যে, ১২ই রবিউল আউয়াল শনিবার ফজরের পর থেকে ইশা পর্যন্ত মাদ্রাসার গেইট বন্ধ থাকবে। এমনকি মাদ্রাসার ভবনগুলোর ছাদের সিঁড়িঘরে প্রবেশের গেটসমূহও তালাবন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে এতোটা গুরুত্ব দেওয়ার আরো একটি কারণ হলো, পরদিন (১৩ই রবিউল আউয়াল) থেকে মাদ্রাসা পরীক্ষা শুরু। যাতে কোনভাবেই স্বাভাবিক পরিবেশের বিঘ্ন না ঘটে। আগে থেকেই উস্তাদদের নির্দেশ এবং হুশিয়ারি থাকায়, ছাত্ররা মানসিকভাবেও সেদিন মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া যাবে না সেরকম প্রস্তুতি হিসেবে প্রযোজনী খাবার, খাতা-কলম, ইত্যাদি আগে থেকেই সংগ্রহ করে নিয়েছিলো।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ভোর থেকেই মাদ্রাসার সকল গেট বন্ধ করে দিয়ে গেটে গেটে কড়া পাহারা বসানো হয় এবং মাদ্রাসার কোন ছাত্রকে বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। এতে আমাদের আশা ছিল, কথিত নামধারী সুন্নীরাও সংযত থেকে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা এরিয়া অতিক্রম করবে। তাছাড়া, আমরা হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনকেও অবগত করেছিলাম, যাতে অন্যান্য বছরের মতো হাটহাজারী মাদ্রাসা এরিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে জুলুসযাত্রীদেরকে মাইকে বাদ্য-বাজনা করতে নিষেধ করে।

কিন্তু ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের নামধারী সুন্নীরা চট্টগ্রাম মহানগরীতে কথিত ঈদে মিলাদুন্নবী ও জলুস উদযাপনের লক্ষে গতকাল সকাল ৭টা থেকে শত শত গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে বিকট শব্দে মাইকে গান-বাজনা, উস্কানীমূলক স্লোগান, অশ্লীল নৃত্য ও কটুক্তিমূলক আচরণ এবং দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে উস্কানী দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। এই সময়ে তারা শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও কাষেদে মিল্লাত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রাহ.) এর কবরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, যেখানে বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। এছাড়া তারা জামিয়ার শতবর্ষী বাইতুল কারীম জামে মসজিদের দিকে অশালীন ভঙ্গিমায় ইশারা করার মত ধৃষ্টতা দেখায়। এমনকি মজিদের আযান এবং জামাআত চলাকালীন সময়েও তাদের বাদ্য-বাজনা ও স্লোগান সমানতালে জারি রাখে।

তাদের উস্কানীর মাত্রা বাড়তে থাকলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থেকে বারংবার অনুরোধ করা হলে দুপুরের পর ২/৩ জায়গায় কিছু পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তারা উস্কানী বন্ধে সমর্থ হয়নি।
উল্লেখ্য, ইশার নামাযের আগে যখন জুলুসের একাধিক গাড়ি থেকে পথচারীদেরকে উদ্যেশ্য করে ওহাবী ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করার চেষ্টা করে, তখন আশেপাশের পথচারীরা তাদের এসব উস্কানীর কড়া প্রতিবাদ করে জানায় যে, তোমরা বিশৃঙ্খলা করতে চাও কেন, তখন পর্যন্তও মাদ্রাসার গেট সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

শত উস্কানী সত্ত্বেও পূর্ব ঘোষণামতে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মাদ্রাসার সকল গেট বন্ধ ছিল, এ সময়ে কোন ছাত্র বাইরে বের হয়নি এবং সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে। কিন্তু আমাদের সকল সংযম ও ধৈর্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতের বেলায় হাটহাজারী বাজারের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় বাজার ও ওষধ ক্রয় করতে যাওয়া ছাত্রদের উপর তারা দেশিয় বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে শতাধিক ছাত্রকে মারাত্মক আহত ও জখম করে। অনেক দোকানপাটে ভাংচুর চালায় এবং নগদ টাকাসহ দ্রব্যসামগ্রী লুটপাট করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আহত বহু ছাত্র এখনো চিকিৎসাধীন। পরীক্ষার জন্য মাদ্রাসায় আসার পথে কিছু ছাত্রের উপরও তারা হামলা চালায় এবং মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগসহ আসবাবপত্র কেড়ে নেয়।

রাত আনুমানিক একটার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমান হাটহাজারী মাদরাসার অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, হাটহাজারী মাদরাসার কোনো ছাত্র গতকালের ঘটনায় নিহত হননি। তবে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশজন ছাত্র এখনো গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।

আমরা আপনাদের মাধ্যমে গতকালকের পুরো ঘটনা দেশবাসীকে জানাতে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি। একই সাথে গতকাল শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে উস্কানী, মসজিদ অবমাননা, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর কবরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর সশস্ত্র হামলা, দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সাথে কথিত সুন্নী নামের বিদআতপন্থীদের যারা ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়াতে উস্কানীমূলক পোস্ট দিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তেজনামুখর করেছে, তাদের গ্রেফতার দাবি করছি।

হাটহাজারী মাদ্রাসার বায়তুল করীম জামে মসজিদের প্রতি অশ্লিল ইঙ্গিত ও উক্তিকারী ফটিকছড়ির আরিয়ান রায়হানের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। একই সাথে সরকারকে গতকালকের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আহত মাদ্রাসা ছাত্রদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।

রবীউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মতো গতকাল প্রশাসনিক যথাযথ উদ্যোগে গাফলতি এবং রাতের অন্ধকারে ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের প্রতিহত করতে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার ঘটনাকে পূর্ণ তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনরি দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে আগামীতে রবীউল আউয়ালের কথিত জুলুস, উরশসহ মাজারের কোন গাড়ি যাতে মাদ্রাসা এরিয়াতে যাতে গান-বাজনা ও স্লোগান দিতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাই।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা!

আমরা আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইদের সাথে মিলিত হয়েছি গতকাল সংঘটিত এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা সম্পর্কে আপনাদেরকে অবগত করতে, যাতে জাতির সামনে সঠিক ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। একই সাথে এই ঘটনায় দায়ীদেরকে যাতে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হয় সেই দাবি তুলে ধরছি।