ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রিয়তমার মনে অন্য প্রিয়জন

  • মোঃ মিলন হক
  • আপডেট সময় ১১:৪৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

 

সাগর বাংলায় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে। তার বাবা একজন দিনমজুর। প্রতিনিয়ত কাজ পান না। “কাজের চেয়ে মানুষ বেশি। কাজ সীমাবদ্ধ, কিন্তু মানুষের চাহিদা অফুরন্ত!”
একদিন বাড়ি থেকে মেসে আসার সময় বাসে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। কথা বলতে বলতে সাগর জানতে পারে, মেয়েটি তার কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সেম ব্যাচের। মেয়েটির নাম আশালতা। সবাই ‘আশা’ বলে। দেখতে বেশ সুন্দরী।
“আশা হেমন্তের প্রবাহমান স্রোতস্বিনীর মতোই শান্ত। দেহের গঠন ফর্সা, পাতলা, লম্বা। বিধাতার দেওয়া এক অপরূপ রূপ বরে তৈরি।”

একদিন ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে দেখা হয় আশার সঙ্গে। অনেকক্ষণ বাদাম খেতে খেতে গল্পগুজব করে। আশা সাগরকে ফেসবুক আইডি দেয়। এরপর দু’জনে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলে। ক্যাম্পাসে দেখা করে। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়। রাতে আশার মেসের সামনে রেখে আসে। আশার মেস অনেকটা ভিতরে। ঐ রাস্তায় অনেক মেয়ের মেস। রাতে ছেলেরা যেন না যেতে পারে, সেজন্য রাস্তায় সিকিউরিটি গার্ড থাকে। প্রতিদিন সিকিউরিটি গার্ড সাগরকে নিষেধ করে।

সাগর আশা কে বলে —
“তুমি যখন চলে যাও, আকাশের তারা ভরা জ্যোৎস্নাও আমার মনে কোনো প্রতিক্রিয়া করে না। তোমার চলে যাওয়ায় আমার পৃথিবী আঁধারে ছেয়ে যায়।”

সাগর আশার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু আশা সাগরকে একজন ভালো বন্ধু ভাবে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছিলেন —
“একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না। কারণ এখানে আবেগ আছে, দৈহিক আকাঙ্ক্ষা আছে।”

আশা একজন ছেলেকে ভালোবাসে। সে ঢাকায় কোম্পানির চাকরি করে। কলেজে থাকা অবস্থাতেই তাদের সম্পর্ক হয়। ঐ ছেলের বিষয়ে আশা সাগরকে কিছু বলেনি।

একদিন বিকেলে ক্যাম্পাসের বটগাছের নিচে বসে থাকে সাগর আর আশা। সাগর বহুবার চেষ্টা করেও ভালোবাসার কথা বলতে পারে না। যতবার বলার চেষ্টা করেছে, ততবার তার ওষ্ঠধর ঝঙ্কারের দোলা দিয়ে ওঠে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে অবশেষে কোনো মতে বলে —
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

একজন ছেলে যদি তার খুব পরিচিত মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় নার্ভাস বোধ করে — সে ছেলে আর যাই করুক, ঐ মেয়েকে না ভালোবেসে পারে না।

এ যেন আশার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাত! সাগরের কথা শুনে আশা পুরোপুরি আশ্চর্য হয়ে যায়। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। সরাসরি না-ও বলতে পারে না, আবার হ্যাঁ-ও বলতে পারে না। কারণ, তার বয়ফ্রেন্ড আছে।

আশা সাগরকে তার সম্পর্কের কথা জানায়। কিন্তু সাগর কিছুতেই বিশ্বাস করে না। সে বলে —
“তোমার কারও সঙ্গে রিলেশন নেই।”

এই নিয়ে দুজনের মধ্যে ভীষণ তর্ক হয়। আশা অভিমান করে সাগরকে মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

তিন দিন কোনো কথা হয় না। সাগর আশার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। সাগর আশা কে মেসেজ দিয়ে লেখে —

“তুমি সূর্য নও, যে তোমার তেজ আছে! তেজ থাকে পুরুষ মানুষের। তুমি গগনে নিশার শশী। তোমার রয়েছে অপরূপ চন্দ্রিকা। যা আকৃষ্ট করে। অভিমানে শর্বরীর বসুমতীকে তুমি করতে পারো না তিমির! তোমার কুমুদীর দীপ্তিতে ভরে উঠুক এ দেহে প্রাণ আমার!”

উত্তরে আশা লেখে —
“বসুমতীকে আমি আঁধার করতে চাইনি। বিষণ্ণতায় ঢেকে দিয়েছে মনের জোয়ার।”

আশা জানায়,
“তুমি আমাকে যতটা ভালোবাসো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি অপারগ তোমার সঙ্গে প্রেমের বন্ধনে জড়াতে। তোমাকে সুখ দিতে গিয়ে, একজনকে ভুলে যেতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করো। তোমার কষ্ট হবে জানি, কিন্তু আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।”

“প্রেম মানে দুটি ভিন্ন মনের একটি অটুট বিশ্বাস।”

সাগর বলে —
“কখনো কাউকে প্রপোজ করিনি। এজন্য প্রেমিক পুরুষের মতো ভাষা জানি না! এটুকু জানি, তোমাকে ভালোবাসি। তোমার প্রতি ভালোবাসার জন্ম কিভাবে হলো কিছুই জানি না। শুধু জানি, তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি সেকেন্ড আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান। তোমাকে একবার দেখার জন্য কত কিছু করি। যেদিন দেখা হয়, হৃদয় মাঝে সকালের সূর্যের হাসি ঝলমল করে। না-দেখতে পেলে বিভীষিকায় বিষণ্ণ হই।”

সাগর বলে —
“বিশ্বাস করো, আমি ভালোবাসি। আমাদের প্রেম হোক বা না হোক, বিশ্বাস করাতে পেরেছি বলে নিজেকে ধন্য মনে করি। অনেক বিরক্ত করেছি। আর চাই না বিরক্ত করতে। ব্লক করে দাও। কখনো ভালোবাসি বলে বিরক্ত করবো না। আমার তোমাকে ব্লক দেওয়া ভীষণ পীড়াদায়ক। তুমি ব্লক দিলে, কখনো বিরক্ত করার সুযোগ পাবো না। হয়তো ক্লাস শেষে দেখা হতে পারে, ক্যাম্পাসে কথা নাও হতে পারে। ভালো থেকো, সুস্থ থেকো। I lose you from my heart forever and again say that I love you.”

এরপর সাগর ভগ্ন হৃদয় নিয়ে সারারাত বিছানায় শুয়ে কান্না করে। হাজারো মনোবেদনায় ব্যথিত হয়ে নিদ্রায় পড়ে।

এরপর অনেক দিন যায়। আশা কে ভুলে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করে। ক্যাম্পাসে দেখা হলে আশা কথা বলার অনেক চেষ্টা করে সাগরের সঙ্গে। সাগরও কথা বলে, তবে সেই কথা নিছক দায়ে পড়ে বলা।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কটুক্তির প্রতিবাদে শেরপুরে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

প্রিয়তমার মনে অন্য প্রিয়জন

আপডেট সময় ১১:৪৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

 

সাগর বাংলায় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে। তার বাবা একজন দিনমজুর। প্রতিনিয়ত কাজ পান না। “কাজের চেয়ে মানুষ বেশি। কাজ সীমাবদ্ধ, কিন্তু মানুষের চাহিদা অফুরন্ত!”
একদিন বাড়ি থেকে মেসে আসার সময় বাসে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। কথা বলতে বলতে সাগর জানতে পারে, মেয়েটি তার কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সেম ব্যাচের। মেয়েটির নাম আশালতা। সবাই ‘আশা’ বলে। দেখতে বেশ সুন্দরী।
“আশা হেমন্তের প্রবাহমান স্রোতস্বিনীর মতোই শান্ত। দেহের গঠন ফর্সা, পাতলা, লম্বা। বিধাতার দেওয়া এক অপরূপ রূপ বরে তৈরি।”

একদিন ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে দেখা হয় আশার সঙ্গে। অনেকক্ষণ বাদাম খেতে খেতে গল্পগুজব করে। আশা সাগরকে ফেসবুক আইডি দেয়। এরপর দু’জনে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলে। ক্যাম্পাসে দেখা করে। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়। রাতে আশার মেসের সামনে রেখে আসে। আশার মেস অনেকটা ভিতরে। ঐ রাস্তায় অনেক মেয়ের মেস। রাতে ছেলেরা যেন না যেতে পারে, সেজন্য রাস্তায় সিকিউরিটি গার্ড থাকে। প্রতিদিন সিকিউরিটি গার্ড সাগরকে নিষেধ করে।

সাগর আশা কে বলে —
“তুমি যখন চলে যাও, আকাশের তারা ভরা জ্যোৎস্নাও আমার মনে কোনো প্রতিক্রিয়া করে না। তোমার চলে যাওয়ায় আমার পৃথিবী আঁধারে ছেয়ে যায়।”

সাগর আশার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু আশা সাগরকে একজন ভালো বন্ধু ভাবে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছিলেন —
“একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না। কারণ এখানে আবেগ আছে, দৈহিক আকাঙ্ক্ষা আছে।”

আশা একজন ছেলেকে ভালোবাসে। সে ঢাকায় কোম্পানির চাকরি করে। কলেজে থাকা অবস্থাতেই তাদের সম্পর্ক হয়। ঐ ছেলের বিষয়ে আশা সাগরকে কিছু বলেনি।

একদিন বিকেলে ক্যাম্পাসের বটগাছের নিচে বসে থাকে সাগর আর আশা। সাগর বহুবার চেষ্টা করেও ভালোবাসার কথা বলতে পারে না। যতবার বলার চেষ্টা করেছে, ততবার তার ওষ্ঠধর ঝঙ্কারের দোলা দিয়ে ওঠে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে অবশেষে কোনো মতে বলে —
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

একজন ছেলে যদি তার খুব পরিচিত মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় নার্ভাস বোধ করে — সে ছেলে আর যাই করুক, ঐ মেয়েকে না ভালোবেসে পারে না।

এ যেন আশার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাত! সাগরের কথা শুনে আশা পুরোপুরি আশ্চর্য হয়ে যায়। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। সরাসরি না-ও বলতে পারে না, আবার হ্যাঁ-ও বলতে পারে না। কারণ, তার বয়ফ্রেন্ড আছে।

আশা সাগরকে তার সম্পর্কের কথা জানায়। কিন্তু সাগর কিছুতেই বিশ্বাস করে না। সে বলে —
“তোমার কারও সঙ্গে রিলেশন নেই।”

এই নিয়ে দুজনের মধ্যে ভীষণ তর্ক হয়। আশা অভিমান করে সাগরকে মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

তিন দিন কোনো কথা হয় না। সাগর আশার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। সাগর আশা কে মেসেজ দিয়ে লেখে —

“তুমি সূর্য নও, যে তোমার তেজ আছে! তেজ থাকে পুরুষ মানুষের। তুমি গগনে নিশার শশী। তোমার রয়েছে অপরূপ চন্দ্রিকা। যা আকৃষ্ট করে। অভিমানে শর্বরীর বসুমতীকে তুমি করতে পারো না তিমির! তোমার কুমুদীর দীপ্তিতে ভরে উঠুক এ দেহে প্রাণ আমার!”

উত্তরে আশা লেখে —
“বসুমতীকে আমি আঁধার করতে চাইনি। বিষণ্ণতায় ঢেকে দিয়েছে মনের জোয়ার।”

আশা জানায়,
“তুমি আমাকে যতটা ভালোবাসো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি অপারগ তোমার সঙ্গে প্রেমের বন্ধনে জড়াতে। তোমাকে সুখ দিতে গিয়ে, একজনকে ভুলে যেতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করো। তোমার কষ্ট হবে জানি, কিন্তু আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।”

“প্রেম মানে দুটি ভিন্ন মনের একটি অটুট বিশ্বাস।”

সাগর বলে —
“কখনো কাউকে প্রপোজ করিনি। এজন্য প্রেমিক পুরুষের মতো ভাষা জানি না! এটুকু জানি, তোমাকে ভালোবাসি। তোমার প্রতি ভালোবাসার জন্ম কিভাবে হলো কিছুই জানি না। শুধু জানি, তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি সেকেন্ড আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান। তোমাকে একবার দেখার জন্য কত কিছু করি। যেদিন দেখা হয়, হৃদয় মাঝে সকালের সূর্যের হাসি ঝলমল করে। না-দেখতে পেলে বিভীষিকায় বিষণ্ণ হই।”

সাগর বলে —
“বিশ্বাস করো, আমি ভালোবাসি। আমাদের প্রেম হোক বা না হোক, বিশ্বাস করাতে পেরেছি বলে নিজেকে ধন্য মনে করি। অনেক বিরক্ত করেছি। আর চাই না বিরক্ত করতে। ব্লক করে দাও। কখনো ভালোবাসি বলে বিরক্ত করবো না। আমার তোমাকে ব্লক দেওয়া ভীষণ পীড়াদায়ক। তুমি ব্লক দিলে, কখনো বিরক্ত করার সুযোগ পাবো না। হয়তো ক্লাস শেষে দেখা হতে পারে, ক্যাম্পাসে কথা নাও হতে পারে। ভালো থেকো, সুস্থ থেকো। I lose you from my heart forever and again say that I love you.”

এরপর সাগর ভগ্ন হৃদয় নিয়ে সারারাত বিছানায় শুয়ে কান্না করে। হাজারো মনোবেদনায় ব্যথিত হয়ে নিদ্রায় পড়ে।

এরপর অনেক দিন যায়। আশা কে ভুলে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করে। ক্যাম্পাসে দেখা হলে আশা কথা বলার অনেক চেষ্টা করে সাগরের সঙ্গে। সাগরও কথা বলে, তবে সেই কথা নিছক দায়ে পড়ে বলা।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471