মোল্লাহাট, বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা মিষ্টি পানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রসিদ্ধ। এই অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পান চাষের সাথে জড়িত। পান বিক্রির আয় দিয়েই চলে অধিকাংশ মানুষের সংসার। তবে গত একমাস ধরে পানের বাজারে ধস নামায় চরম সংকটে পড়েছেন এ উপজেলার পানচাষীরা।
মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও রোগবালাইয়ের প্রভাব থাকলেও ফলন হয়েছে ভালো। কিন্তু বাজারে দাম নেই। আগে যে মোটা ও বড় আকৃতির পান বিড়াপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৩০-৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। মাঝারি ও চিকন পানের ক্ষেত্রে দাম পড়েছে মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকা—যেখানে আগে তা বিক্রি হতো ১০-২০ টাকায়।
মোল্লাহাট উপজেলায় উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয় এবং রপ্তানিও হয়ে থাকে। উপজেলার মোল্লাহাট বাজারসহ চুনগোলা,জয়ঢিকি আড়তে সপ্তাহে সাত দিনই কেনা-বেচা হয়। আড়তগুলোতে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার পানের লেনদেন হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
উপজেলার ভৈরবনগর গ্রামের পানচাষী বিজন মন্ডল বলেন, ৫ কাঠা করে দুটি বরজই ছিল সংসারের প্রধান ভরসা। প্রতিবছর এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় হতো। এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে।”
১নং, উদয়পুর ইউনিয়নের গিরিশনগর গ্রামের এক কৃষক নাম প্রকাশ না করে জানান, “বর্ষার শুরুতেই ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি সুদে। এখন পান বিক্রি করছি কম দামে, কারণ কিস্তি দিতে হবে। এনজিও আর ঋণের কিস্তির টাকা দিয়ে কিছুই হাতে থাকছে না।”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মোল্লাহাটে প্রায় ২০০০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষাকালে পানের উৎপাদন বাড়লেও দাম কমে যায়, তবে শীত মৌসুমে চড়া দাম থাকে, তখন লোকসান কিছুটা পুষিয়ে যায়।
মোল্লাহাট উপজেলার উপ-সহকারী অজয় মল্লিক বলেন, “পান দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় দাম ওঠানামা করে। বর্ষাকালে বাজারে সরবরাহ বেশি থাকে, তাই দাম পড়ে যায়। তবে পান চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।”
পানচাষিদের দাবি, বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকতে পারে। তাঁদের প্রশ্ন—পণ্যের দাম বাড়ছে, অথচ পানের দাম কেন কমছে? বর্তমানে উপজেলায় পান চাষের সাথে জড়িত পরিবারগুলো ঋণের ফাঁদে পড়ছে, আর্থিক সংকটে নাকাল হয়ে পড়েছে।