ঢাকা ১১:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ “বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস”, মৃত্যুহার প্রতিরোধে যা করণীয়:

  • রায়হান শেখ
  • আপডেট সময় ০৫:৫৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
আজ ২৫ জুলাই “বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস”। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতি বছর এই দিবসটি গুরুত্বসহকারে সারাবিশ্বে পালিত হয়।

এই দিবসটি মূলত পালন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- সারা বিশ্বেই দিনে দিনে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে এই পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে এবিষয়ে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, জনসচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হার প্রতিরোধ করা সম্ভব যে, সেটির লক্ষ্যেই এই দিনটিকে নির্ধারণ করা হয়। সাম্প্রতিক আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।

কোরআন বর্ণিত আছে যে, পৃথিবীর যেকোনো প্রাণীকেই নির্ধারিত একটি সময়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে মৃত্যুর মাঝে পানিতে ডুবে মৃত্যু হ‌ওয়াটা অস্বাভাবিক ও যন্ত্রণাদায়ক। যার প্রেক্ষিতে কোরআনে আরো উল্লেখিত আছে যে -আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও মহামারী, আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীরাও শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে, শিশুদের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক, তাই এই বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে সম্ভবনাময় শিশু ও তরুণ পর্যটকের সংখ্যাই বেশি। সারা বিশ্বে প্রতিবছর এই মৃত্যুর সংখ্যা তিন লক্ষের মত। বেশির ভাগ মৃত্যুই দরিদ্র দেশগুলোতে ঘটে।

জাতিসংঘ ২০২১ সালে ‘২৫ জুলাই বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর বিশ্বে এই দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশ ও সেই ঘোষণার সাথে একাত্ব হয়ে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু তেমন কার্যক্রম নেই। তাই পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

পানিতে ডুবে মোট মৃত্যুর ৯০ % এর বেশি ঘটে থাকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এশিয়া ও আফ্রিকাতে পানিতে ডুবে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। পানিতে ডোবার ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। গ্রামাঞ্চলে অধিকসংখ্যক শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।

বিশ্বে শিশু মৃত্যুর ১০টি প্রধান কারণের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু অন্যতম। বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এক-চার বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে,এরপর রয়েছে ৫-৯ বছর বয়সী শিশুরা।

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের সবসময় তত্ত্বাবধানে রাখা, সাঁতার শেখা, লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা, এবং বিপদজ্জনক স্থান এড়িয়ে চলা। এছাড়াও, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও জরুরি।
পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচতে যা করতে পারেন:
সতর্ক থাকুন এবং শিশুদের নজরে রাখুন:
শিশুদের কখনই একা পানিতে নামতে বা পানিতে কাছাকাছি একা থাকতে দেবেন না।
সাঁতার শেখানো, বিশেষ করে শিশুদের জন্য, খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়ির আশেপাশে পুকুর বা জলাশয় থাকলে, সেখানে বেড়া দেওয়া উচিত।
সাঁতার জানুন এবং লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন:
সাঁতার জানা থাকলে যে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং অন্যদের সাহায্য করা সহজ হয়।
নদী বা সাগরে ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট পরা আবশ্যক।
জলাশয়ের আশেপাশে সতর্ক থাকুন:
অপরিচিত বা বিপজ্জনক স্থান এড়িয়ে চলুন।
সাঁতার কাটার সময় লাইফগার্ড থাকলে ভালো হয়।
উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন:
পানিতে কেউ ডুবে গেলে দ্রুত উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করার জন্য দড়ি বা অন্য কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করার পর দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সচেতনতা বৃদ্ধি করুন:
এলাকার মানুষকে পানিতে ডুবে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন করুন।
ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচতে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করুন।
অন্যান্য সতর্কতা:
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত নয়।
খারাপ আবহাওয়ায় পানিতে নামা উচিত নয়।
নদী বা সাগরে একা সাঁতার না কাটাই ভালো।
এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে পারলেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার অনেকটা হ্রাস পাওয়া সম্ভব।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

নৈতিক ও আদর্শ শিক্ষা ছাড়া দেশ এবং জাতি গঠন করা সম্ভব না— আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন।

আজ “বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস”, মৃত্যুহার প্রতিরোধে যা করণীয়:

আপডেট সময় ০৫:৫৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
আজ ২৫ জুলাই “বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস”। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতি বছর এই দিবসটি গুরুত্বসহকারে সারাবিশ্বে পালিত হয়।

এই দিবসটি মূলত পালন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- সারা বিশ্বেই দিনে দিনে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে এই পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে এবিষয়ে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, জনসচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হার প্রতিরোধ করা সম্ভব যে, সেটির লক্ষ্যেই এই দিনটিকে নির্ধারণ করা হয়। সাম্প্রতিক আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।

কোরআন বর্ণিত আছে যে, পৃথিবীর যেকোনো প্রাণীকেই নির্ধারিত একটি সময়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে মৃত্যুর মাঝে পানিতে ডুবে মৃত্যু হ‌ওয়াটা অস্বাভাবিক ও যন্ত্রণাদায়ক। যার প্রেক্ষিতে কোরআনে আরো উল্লেখিত আছে যে -আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও মহামারী, আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীরাও শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে, শিশুদের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক, তাই এই বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে সম্ভবনাময় শিশু ও তরুণ পর্যটকের সংখ্যাই বেশি। সারা বিশ্বে প্রতিবছর এই মৃত্যুর সংখ্যা তিন লক্ষের মত। বেশির ভাগ মৃত্যুই দরিদ্র দেশগুলোতে ঘটে।

জাতিসংঘ ২০২১ সালে ‘২৫ জুলাই বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর বিশ্বে এই দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশ ও সেই ঘোষণার সাথে একাত্ব হয়ে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু তেমন কার্যক্রম নেই। তাই পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

পানিতে ডুবে মোট মৃত্যুর ৯০ % এর বেশি ঘটে থাকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এশিয়া ও আফ্রিকাতে পানিতে ডুবে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। পানিতে ডোবার ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। গ্রামাঞ্চলে অধিকসংখ্যক শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।

বিশ্বে শিশু মৃত্যুর ১০টি প্রধান কারণের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু অন্যতম। বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এক-চার বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে,এরপর রয়েছে ৫-৯ বছর বয়সী শিশুরা।

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের সবসময় তত্ত্বাবধানে রাখা, সাঁতার শেখা, লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা, এবং বিপদজ্জনক স্থান এড়িয়ে চলা। এছাড়াও, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও জরুরি।
পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচতে যা করতে পারেন:
সতর্ক থাকুন এবং শিশুদের নজরে রাখুন:
শিশুদের কখনই একা পানিতে নামতে বা পানিতে কাছাকাছি একা থাকতে দেবেন না।
সাঁতার শেখানো, বিশেষ করে শিশুদের জন্য, খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়ির আশেপাশে পুকুর বা জলাশয় থাকলে, সেখানে বেড়া দেওয়া উচিত।
সাঁতার জানুন এবং লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন:
সাঁতার জানা থাকলে যে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং অন্যদের সাহায্য করা সহজ হয়।
নদী বা সাগরে ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট পরা আবশ্যক।
জলাশয়ের আশেপাশে সতর্ক থাকুন:
অপরিচিত বা বিপজ্জনক স্থান এড়িয়ে চলুন।
সাঁতার কাটার সময় লাইফগার্ড থাকলে ভালো হয়।
উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন:
পানিতে কেউ ডুবে গেলে দ্রুত উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করার জন্য দড়ি বা অন্য কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করার পর দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সচেতনতা বৃদ্ধি করুন:
এলাকার মানুষকে পানিতে ডুবে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন করুন।
ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচতে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করুন।
অন্যান্য সতর্কতা:
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত নয়।
খারাপ আবহাওয়ায় পানিতে নামা উচিত নয়।
নদী বা সাগরে একা সাঁতার না কাটাই ভালো।
এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে পারলেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার অনেকটা হ্রাস পাওয়া সম্ভব।