ঢাকা ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন। “সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ — ওসি না সরালে দুর্বার আন্দোলন”

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৪৪:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

এম. শাহাবুদ্দিন, রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহীতে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে শাহমখদুম থানায় দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সাংবাদিক সমাজ। এ ঘটনায় মামলা প্রত্যাহার ও ওসিকে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব।

মানববন্ধনে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের পাশাপাশি রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, রাজশাহী প্রেসক্লাব, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহীর শাখা, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও তাদের সদস্যরা অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাহমখদুম থানার ওসিকে অপসারণের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

মিথ্যা মামলার অভিযোগ:

গত ২৬ আগস্ট রাজশাহী নগরীর অগ্রণী ব্যাংক আরডিএ শাখায় জমি নিলামকে কেন্দ্র করে এক ঘটনায় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয়দানকারী প্রতারক আক্তারুল ইসলামের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় আক্তার একজন সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

পরে সাংবাদিকরা প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে ওসি মাছুমা মুস্তারী মামলা না নিয়ে কেবল লিখিত অভিযোগ নেন। এরপর সাংবাদিকদের ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি প্রতারক আক্তারের দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা (নম্বর-২/২০২৫) ২ সেপ্টেম্বর শাহমখদুম থানায় রেকর্ড করেন। এতে ছয় সাংবাদিক ও এক ঠিকাদারকে আসামি করা হয়।

মামলায় আসামি করা সাংবাদিকরা হলেন—‘রাজশাহীর আলো’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আজিবার রহমান, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ, আরটিভির ক্যামেরাম্যান আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন, গণমুক্তি পত্রিকার ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম এবং ‘আজকের প্রত্যাশা’র সাংবাদিক নাজমুল হক।

প্রতারক আক্তারের অভিযোগ, সাংবাদিকরা তার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তবে ঘটনার ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করছে। এমনকি প্রতারক আক্তার স্বীকার করেন তিনি মামলা সম্পর্কে জানে না, প্রশাসনের চাপে তিনি মামলা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের দাবি, এটি পুরোপুরি প্রতিশোধমূলক মামলা, যা পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকারই প্রমাণ। সাংবাদিকের মামলা না নিয়ে আ’লীগের দোসর প্রতারক আক্তারুল ইসলামকে থানায় ওসি মামলা নেয়। মূলত ফ্যাসিস্ট ওসি একজন ফ্যাসিস্টকে বাঁচাতে ও নিজের নানা অপকর্ম ঢাকতে এ মিথ্যা মামলাটি নেয়। মামলার একজন আসামী ওইদিন ঢাকায় ছিলো সেও নিউজ করার অপরাধে মামলার আসামী হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। অথচ পুলিশ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগীদের আসামি করেছে। এটি শুধু সাংবাদিকদের নয়, গণতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলছে।”
রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমসহ অন্যান্য বক্তারা বলেন, “আমরা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ওসিকে অপসারণ দাবি করছি। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।” আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওসিকে প্রত্যাহার পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেন তাঁরা।
সাংবাদিক নেতারা মনে করছেন, এই মামলা ‘গণমাধ্যমকর্মী সুরক্ষা আইন’ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছে। তারা বলেন, এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ আরিফ, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রকি, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি মীর তোফায়েল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন জাহিদ, সদস্য তন্ময় দেন নাথ, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সদস্য রাকিবুল ইসলাম রকি, প্রেসিডিয়াম মেম্বার লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার মাখন প্রমূখ।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রেলী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন। “সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ — ওসি না সরালে দুর্বার আন্দোলন”

আপডেট সময় ০৭:৪৪:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এম. শাহাবুদ্দিন, রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহীতে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে শাহমখদুম থানায় দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সাংবাদিক সমাজ। এ ঘটনায় মামলা প্রত্যাহার ও ওসিকে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব।

মানববন্ধনে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের পাশাপাশি রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, রাজশাহী প্রেসক্লাব, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহীর শাখা, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও তাদের সদস্যরা অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাহমখদুম থানার ওসিকে অপসারণের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

মিথ্যা মামলার অভিযোগ:

গত ২৬ আগস্ট রাজশাহী নগরীর অগ্রণী ব্যাংক আরডিএ শাখায় জমি নিলামকে কেন্দ্র করে এক ঘটনায় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয়দানকারী প্রতারক আক্তারুল ইসলামের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় আক্তার একজন সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

পরে সাংবাদিকরা প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে ওসি মাছুমা মুস্তারী মামলা না নিয়ে কেবল লিখিত অভিযোগ নেন। এরপর সাংবাদিকদের ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি প্রতারক আক্তারের দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা (নম্বর-২/২০২৫) ২ সেপ্টেম্বর শাহমখদুম থানায় রেকর্ড করেন। এতে ছয় সাংবাদিক ও এক ঠিকাদারকে আসামি করা হয়।

মামলায় আসামি করা সাংবাদিকরা হলেন—‘রাজশাহীর আলো’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আজিবার রহমান, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ, আরটিভির ক্যামেরাম্যান আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন, গণমুক্তি পত্রিকার ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম এবং ‘আজকের প্রত্যাশা’র সাংবাদিক নাজমুল হক।

প্রতারক আক্তারের অভিযোগ, সাংবাদিকরা তার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তবে ঘটনার ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করছে। এমনকি প্রতারক আক্তার স্বীকার করেন তিনি মামলা সম্পর্কে জানে না, প্রশাসনের চাপে তিনি মামলা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের দাবি, এটি পুরোপুরি প্রতিশোধমূলক মামলা, যা পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকারই প্রমাণ। সাংবাদিকের মামলা না নিয়ে আ’লীগের দোসর প্রতারক আক্তারুল ইসলামকে থানায় ওসি মামলা নেয়। মূলত ফ্যাসিস্ট ওসি একজন ফ্যাসিস্টকে বাঁচাতে ও নিজের নানা অপকর্ম ঢাকতে এ মিথ্যা মামলাটি নেয়। মামলার একজন আসামী ওইদিন ঢাকায় ছিলো সেও নিউজ করার অপরাধে মামলার আসামী হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। অথচ পুলিশ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগীদের আসামি করেছে। এটি শুধু সাংবাদিকদের নয়, গণতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলছে।”
রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমসহ অন্যান্য বক্তারা বলেন, “আমরা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ওসিকে অপসারণ দাবি করছি। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।” আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওসিকে প্রত্যাহার পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেন তাঁরা।
সাংবাদিক নেতারা মনে করছেন, এই মামলা ‘গণমাধ্যমকর্মী সুরক্ষা আইন’ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছে। তারা বলেন, এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ আরিফ, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রকি, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি মীর তোফায়েল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন জাহিদ, সদস্য তন্ময় দেন নাথ, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সদস্য রাকিবুল ইসলাম রকি, প্রেসিডিয়াম মেম্বার লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার মাখন প্রমূখ।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471