ঢাকা ০২:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওহাটা সরকারি কলেজে জাল সনদে চাকরির অভিযোগ, প্রভাষকের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

 

জাল সনদপত্র দাখিল, একাধিক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের এক প্রভাষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত প্রভাষক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী বরখাস্ত না হয়ে উল্টো তাঁর জামিনে কলেজের অধ্যক্ষের সহায়তার অভিযোগও উঠেছে।
মঙ্গলবার সকালে কলেজ ফটকের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত মো. আব্দুর রব কলেজটিতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং তিনি জেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত।
সকাল ১০টার দিকে আয়োজিত মানববন্ধনে কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা অংশ নেন। মানববন্ধনে “জাল সনদের ঠিকানা, এই কলেজে হবে না”, “দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের বহিষ্কার চাই”, “মামলার আসামির হাতে কলম কেন?”—ইত্যাদি শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, “যে শিক্ষক নিজেই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত, তাঁর কাছে আমরা নৈতিকতার শিক্ষা কীভাবে পাব? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা তাঁর অপসারণ চাই।”
একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি জ্ঞান অর্জনের জন্য। কিন্তু যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই এমন গুরুতর অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। কর্তৃপক্ষ কেন এখনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।”
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি ও মাদকসহ একাধিক মামলার অভিযোগ, তাঁর কাছে আমাদের সন্তানেরা কী শিখবে? প্রতিষ্ঠান প্রধানও যদি তাঁকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আমরা কোথায় যাব?”
অভিযোগ অনুযায়ী, প্রভাষক আব্দুর রব ২০১৫ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমএ সনদ দিয়ে নওহাটা ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত। তাঁর দাখিল করা আলিম পাসের সনদেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালে ১.৯২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও তিনি সনদ টেম্পারিং করে পাসের বছর ২০০৮ এবং জিপিএ ৩.৬৭ দেখান।
নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত পর্বে সর্বনিম্ন নম্বর পেলেও তৎকালীন স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আব্দুর রব গ্রেপ্তার হন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কোনো কর্মচারী গ্রেপ্তার হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম। কিন্তু নওহাটা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান তা না করে উল্টো রবের জামিনের জন্য কলেজ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এই প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতেই রব প্রায় এক মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান।
অধ্যক্ষের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণে কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাবের কারণে অভিযুক্ত রবকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
রবের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় আরও পাঁচটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর আগে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি দুইবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক মো. আব্দুর রবের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান প্রভাষক আব্দুর রবকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আইন মোতাবেক তাকে কলেজ থেকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।” গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তা করা হয়নি।
মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা অভিযুক্ত প্রভাষককে অবিলম্বে বরখাস্ত করে তদন্তপূর্বক স্থায়ীভাবে চাকুরীচ্যুত করার দাবি জানান। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমন ভূমিকার পর শিক্ষা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানে রোল মডেল: পরপর ৩ বার বিশেষ সম্মাননায় নতুনধরা এসেটস্!

নওহাটা সরকারি কলেজে জাল সনদে চাকরির অভিযোগ, প্রভাষকের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ

আপডেট সময় ০১:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

 

জাল সনদপত্র দাখিল, একাধিক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের এক প্রভাষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত প্রভাষক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী বরখাস্ত না হয়ে উল্টো তাঁর জামিনে কলেজের অধ্যক্ষের সহায়তার অভিযোগও উঠেছে।
মঙ্গলবার সকালে কলেজ ফটকের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত মো. আব্দুর রব কলেজটিতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং তিনি জেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত।
সকাল ১০টার দিকে আয়োজিত মানববন্ধনে কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা অংশ নেন। মানববন্ধনে “জাল সনদের ঠিকানা, এই কলেজে হবে না”, “দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের বহিষ্কার চাই”, “মামলার আসামির হাতে কলম কেন?”—ইত্যাদি শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, “যে শিক্ষক নিজেই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত, তাঁর কাছে আমরা নৈতিকতার শিক্ষা কীভাবে পাব? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা তাঁর অপসারণ চাই।”
একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি জ্ঞান অর্জনের জন্য। কিন্তু যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই এমন গুরুতর অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। কর্তৃপক্ষ কেন এখনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।”
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি ও মাদকসহ একাধিক মামলার অভিযোগ, তাঁর কাছে আমাদের সন্তানেরা কী শিখবে? প্রতিষ্ঠান প্রধানও যদি তাঁকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আমরা কোথায় যাব?”
অভিযোগ অনুযায়ী, প্রভাষক আব্দুর রব ২০১৫ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমএ সনদ দিয়ে নওহাটা ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত। তাঁর দাখিল করা আলিম পাসের সনদেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালে ১.৯২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও তিনি সনদ টেম্পারিং করে পাসের বছর ২০০৮ এবং জিপিএ ৩.৬৭ দেখান।
নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত পর্বে সর্বনিম্ন নম্বর পেলেও তৎকালীন স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আব্দুর রব গ্রেপ্তার হন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কোনো কর্মচারী গ্রেপ্তার হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম। কিন্তু নওহাটা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান তা না করে উল্টো রবের জামিনের জন্য কলেজ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এই প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতেই রব প্রায় এক মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান।
অধ্যক্ষের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণে কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাবের কারণে অভিযুক্ত রবকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
রবের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় আরও পাঁচটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর আগে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি দুইবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক মো. আব্দুর রবের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান প্রভাষক আব্দুর রবকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আইন মোতাবেক তাকে কলেজ থেকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।” গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তা করা হয়নি।
মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা অভিযুক্ত প্রভাষককে অবিলম্বে বরখাস্ত করে তদন্তপূর্বক স্থায়ীভাবে চাকুরীচ্যুত করার দাবি জানান। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমন ভূমিকার পর শিক্ষা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471