মোঃ মিলন হক
দৃশ্য: ১
নাঈম তার স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে সিগারেট খাওয়া শুরু করে।
রহমান আলী: একদিন সন্ধ্যায় বাজার করতে গিয়ে নাঈমকে সিগারেট খেতে দেখে।
রহমান আলী গ্রামের মাতব্বর হাশেম মিয়ার চাকর। রহমান আলী সন্ধ্যায় বাজার থেকে ফিরে এসে নাঈমের সিগারেট খাওয়ার বিষয় উত্থাপন করেন হাশেম মিয়ার কাছে।
হাশেম মিয়া:
“এই সালা তো গ্রামে বড়ই বেড়ে গেছে। এরে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া লাগবে। রহমান, যা গিয়ে সবাইকে খবর দে, আজ রাত ১০টায় মসজিদের সামনে উঠোনে সালিশি বসবে।”
রহমান:
“জি, আইচ্ছা।”
রহমান মিয়া সবার বাড়িতে গিয়ে খবর দেয়।
বিচার হবে গফুরের ছেলে নাঈমের। গফুরকে বলে, “আপনার ছেলেকে মাতব্বর সাব সালিশিতে উপস্থিত থাকতে কইছেন।”
রাত ১০টায় বৈঠক বসে।
বৈঠকে নাঈমকে মাতব্বর খসরু মিয়া মোবাইল চুরি ও সিগারেট খাওয়ার অপরাধে জুতাপেটা করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়।
গফুর: (কান্নাভেজা চোখে)
“হাশেম ভাই, আমার মা মারা ছাওয়াডারে এত বড় শাস্তি দেবেন না। আমি মরব, ছাওয়াডারে ছাড়া। ভাই, রক্ষা করুন আমার ছেলেকে।”
দৃশ্য: ২
নাঈম নিজ গ্রাম ও পরিবার ছেড়ে পার্শ্ববর্তী শহর শিবগঞ্জে চায়ের দোকানে কাজ করে দিনাতিপাত করে। লজ্জায় গ্রামে যেতে পারে না।
তার বাবা গফুরেরও কোনো খোঁজ পায় না।
প্রায় দুই বছর হয়ে গেল।
বাজারের পাশে একজন পতিতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠে।
পতিতার নাম: নার্গিস।
নার্গিস নাঈমকে পেয়ে তার অন্ধকার জীবন ছেড়ে দিয়েছে।
নাঈম একদিন সন্ধ্যার পর নার্গিসের সঙ্গে দেখা করতে যায়।
দেখতে গিয়ে সে তার নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারে না!!
দৃশ্য: ৩
নাঈম (উত্তেজিত, কাঁপা গলায়):
“আপনি আমাগো গ্রামের মাতব্বর কা`হা না?
আপনি আমাকে সিগারেট খাওয়ার অপরাধে, আর মিথ্যা চুরির দোষ চাপিয়ে আমার বাবা, গ্রাম, আত্মীয়-স্বজন ছাড়া করেছিলেন।”
নাঈম (তীব্রভাবে):
“আপনি সেই দিন সালিশিতে বলেছিলেন—
‘আমি গেরামের মাতব্বর, আমাগো গেরামে কেউ কখনো সিগারেট বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করতে পারবে না।
কোন সিগারেট খোরের জায়গা এই গেরামে হবে না।
আমি যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন কেউ এসব কাজ করতে পারবে না।
আমাগো গেরামে সবাই নামাজ পড়বে, দীনী শিক্ষা লাভ করবে, ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করবে।”
নাঈম (চোখে আগুন):
“আপনি আমাকে সেদিন পঞ্চাশ বার জুতাপেটা করেছিলেন। ধাক্কা দিয়ে গেরাম থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
আপনি বলেছিলেন— ‘আমাগো গেরামে কোনো কুলাঙ্গারের বাস হবে না।’ ”
নাঈম (এক পা এগিয়ে):
“এখন, আপনি এখানে!
আপনার ঠিকানা কবে থেকে পতিতালয়ে হলো?
আপনি না আমাগো গেরামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রক্ষক ছিলেন?
এই জন্য ছোটবেলায় আপনার মেয়ে মার্জিনার কাছে শুনতাম, বাবাই শহরে গেছেন।”
নাঈম (গর্জে উঠে):
“আপনি আমাকে সিগারেট খাওয়ার অপরাধে গেরাম থেকে
বের করে দিয়েছিলেন,
আপনি গ্রাম ছেড়ে শহরে ব্যবসার নামে পতিতালয়ে এসে পতিতার নগ্ন পা কাঁধের ওপর নেওয়ার জন্য বিচার হবেন না?”
দৃশ্য: ৪
হাশেম মিয়া: (কান্নাকাটি করে)
নাঈমের পায়ে পড়ে বললেন,
“বাজান, হামারে বাঁচা। হামার ইজ্জত ধূলিসাৎ করিস না। হামি তোয়ার মুরুব্বি।”
নাঈম:
“সেই দিন হামার বাপ তোর কাছেও প্রাণ ভিক্ষে চাইছিল।
তুই কিন্তু দিস নি।”
দৃশ্য: ৫
নার্গিস এসে দেখে একজন বয়স্ক লোক নাঈমের পা ধরে আছে।
নার্গিস:
“কি হয়েছে? এই লোক’কে পা ধরে আছে? আপনি মাথা তুলুন।”
হাশেম মিয়া:
“আমাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাথা তুলবো না।”
নার্গিস:
“নাঈম, তুমি কেনো কিছু বলছো না? কি হয়েছে?”
নাঈম:
“আমি এর জন্য ঘর ছাড়া, একমাত্র বাবা ছাড়া এত দিন।”
নার্গিস:
“বলে, মাথা তুলুন।”
হাশেম মিয়া: (ধীরে ধীরে মাথা তুলে)
নার্গিস তাকে চিনতে পেয়ে তার মুখে লাথি মারলো।
“এই শয়তান প্রায় চৈতির কাছে আসতো।”
দৃশ্য: ৬
পরদিন সকাল সকাল শহর থেকে হাশেম মিয়া গ্রামে আসে।
তার মন ছটফট করে।
সারাদিন উত্তেজনায় কাটায়।
কোনো সময় জানি না, নাঈম এসে সবার কাছে হাশেম মিয়ার ব্যাপারে সব প্রকাশ করে দেয়।
হাশেম মিয়া গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে,
তার পুকুর পাড়ের আম গাছের তলায় গলায় ফাঁস দেয়।
হাশেম আলীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর,
নাঈম আলী তার বাবার কাছে ফিরে আসে।
[নাটক লেখার স্থান: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। বিজয় ২৪ হল। রুম নাম্বার ৪১০]