ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা নদীর ওপর বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের বেইলি সেতুটি আশির দশকে নির্মাণ করা হয়। সেতুটিতে ৩৬ বছর ধরে যানবাহন চলেছে। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা খুবই নড়বড়ে। লক্কড়ঝক্কড় সেতুটি ৬ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেই দায়সারাভাবে কাজ সেরেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নতুন সেতু নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও সেতু বিভাগ, বরং প্রতি বছর সেতু সংস্কারে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
জানা গেছে, চলাচলে প্রায় অযোগ্য এ ব্রিজটি ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২২ বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় এ সড়কের ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করে। চালকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে যান চালাচ্ছে। ব্রিজের ওপর কোনো ট্রাক-বাস উঠলে দুলতে থাকে। ব্রিজের মাঝখানে কোনো সড়ক বাতি না থাকায় রাতের আঁধারে পথচারীরা চলাচলের সময় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক স্থানের পাটাতনের ক্ষত স্থানে নতুন পাত ঝালাই দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসী শিগগির ক্ষতিগ্রস্ত এ বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে ঢালাই ব্রিজ নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা সেতুটির নাম দিয়েছেন ‘সড়ক বিভাগের ডিম পাড়া হাঁস’। তাদের দাবি, এটি যতবার মেরামত করা হয়, ততবারই লাভবান হয় ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা। টেন্ডার ছাড়া নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বছরে ৩-৪ বার সেতুটি মেরামত করে থাকে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবার মেরামতে খরচ হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। যা গত ছয় বছরে খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকার উপরে
সওজের ঝালকাঠি কার্যালয় জানিয়েছে, স্টিলের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে সেখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ঢাকায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নাবিল হাসান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা বেইলি সেতুটি কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করার জন্য ডিজাইন (নকশা) ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান বলেন, ‘এই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এরই মধ্যে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করেছি। বাকি তথ্যগুলো আমরা প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠিয়েছি। ডিপিপি বাস্তবায়ন হলে শিগগির এখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। ফলোআপ প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির জন্য ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালকের কাছে সম্ভাব্য সেতুর যে তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বাসন্ডা সেতুর নামও রয়েছে। অনুমোদন পেলেই নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।