ঢাকা ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজাপুরে কৃষি প্রণোদনায় হরিলুট

 

সরকারি কাগজে বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে প্রান্তিক কৃষকরা কিছুই পাচ্ছেন না—এ যেন এখন রাজাপুরে নিয়মিত দৃশ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত বিনামূল্যের সার, বীজ ও চারা যেন হাতিয়ে নিচ্ছে বিশেষ একটি গোষ্ঠী। আর মাঠের পর মাঠ চাষ করে হালধরা কৃষকেরা রয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিত—নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন অবিচার।

রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ৪২০ জন কৃষককে উফশী আমনের বীজ ও সার, ১২০ জনকে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বীজ, ১৮০ জনকে লেবুর চারা, ১৩০ জনকে আম চারা, ৫০০ জন কৃষক এবং ১২০টি প্রতিষ্ঠানে নারিকেল চারা এবং ৬৪টি কৃষক সংগঠনকে তাল চারা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্যও বরাদ্দ ছিল নিম, বেল, জাম ও কাঁঠালের চারা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই চারা, বীজ আর সার গেল কোথায়? কারা পেল?
“বলে নাই” আর “নাম নেই”—এটাই যেন চাষিদের নিয়তি!

রাজাপুরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান, কামাল হোসেন, সোহরাব হোসেন, মোকসেদ আলী হাওলাদারসহ অন্তত এক ডজন কৃষক ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন-“সারা বছর মাঠে ঘাম ঝরাই, কিন্তু কৃষি অফিসে গেলে বলে ‘নাই’! তাহলে কারা পায় এই প্রণোদনা? আমরা কি কৃষক না?”

তারা জানান, ৫ থেকে ৮ বিঘা জমিতে ধান, তরমুজ, ডাল, শাকসবজি চাষ করেও কৃষি অফিসের কোনো সহায়তা পান না। এমনকি পরামর্শ চাইলে কেউ আসেন না, ফোন ধরেন না।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা. শাহিদা শারমিন আফরোজের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। ভিডিও বা মৌখিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেওয়ার এই অস্বচ্ছ আচরণ প্রশ্ন তোলে—কী লুকাতে চাচ্ছেন এই কর্মকর্তা? রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় প্রণোদনার বাণিজ্য?

ক্ষুব্ধ কৃষকদের অভিযোগ, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে সরকারি প্রণোদনা বিতরণ করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলবাজ, স্বজন ও সুবিধাভোগী মহলকে। অনেকে কৃষি না করেও বরাদ্দ নিচ্ছেন শুধুমাত্র ‘পরিচয়ের জোরে’। এদিকে চাষাবাদে নিঃস্ব কৃষকরা বর্ষা ও রবি মৌসুমে জোগাড় করতে পারছেন না প্রয়োজনীয় উপকরণ।

রাজাপুরের কৃষক সমাজ বলছে, “সরকার কৃষিকে ডিজিটাল করছে, অথচ আমাদের প্রাপ্যটা পাচ্ছি না। কাগজে কোটিপতি, বাস্তবে আমরা ফাঁকা হাতে মাঠে নামি। সরকার কৃষকের পাশে থাকেন—তবে স্থানীয় অফিস কেন আমাদের পেছনে ছুরি চালায়?”

তারা জোর দাবি জানান, এই প্রণোদনা বিতরণে দুর্নীতির তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। কৃষকরা যদি বঞ্চিতই থাকে, তবে এই প্রণোদনার অর্থ শেষ পর্যন্ত কাদের পকেটে যায়—তা জনসমক্ষে আসা উচিত।

সরকার যেখানে কৃষিকে এগিয়ে নিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে, সেখানে রাজাপুরের মতো উপজেলা পর্যায়ে দুর্নীতি আর গাফিলতি পুরো কর্মসূচির উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দুর্নীতির দায় কেউ এড়িয়ে যেতে পারবে না—এখন দরকার নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর জবাবদিহি।
এ বিষয়ে রাজাপুর কৃষি কর্মকর্তা সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় তদন্ত চলছে এ বিষয়ে যাদের জড়িত পাওয়া যাবে তাদের উপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

শিবগঞ্জে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

রাজাপুরে কৃষি প্রণোদনায় হরিলুট

আপডেট সময় ০৭:৫৩:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

 

সরকারি কাগজে বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে প্রান্তিক কৃষকরা কিছুই পাচ্ছেন না—এ যেন এখন রাজাপুরে নিয়মিত দৃশ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত বিনামূল্যের সার, বীজ ও চারা যেন হাতিয়ে নিচ্ছে বিশেষ একটি গোষ্ঠী। আর মাঠের পর মাঠ চাষ করে হালধরা কৃষকেরা রয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিত—নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন অবিচার।

রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ৪২০ জন কৃষককে উফশী আমনের বীজ ও সার, ১২০ জনকে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বীজ, ১৮০ জনকে লেবুর চারা, ১৩০ জনকে আম চারা, ৫০০ জন কৃষক এবং ১২০টি প্রতিষ্ঠানে নারিকেল চারা এবং ৬৪টি কৃষক সংগঠনকে তাল চারা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্যও বরাদ্দ ছিল নিম, বেল, জাম ও কাঁঠালের চারা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই চারা, বীজ আর সার গেল কোথায়? কারা পেল?
“বলে নাই” আর “নাম নেই”—এটাই যেন চাষিদের নিয়তি!

রাজাপুরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান, কামাল হোসেন, সোহরাব হোসেন, মোকসেদ আলী হাওলাদারসহ অন্তত এক ডজন কৃষক ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন-“সারা বছর মাঠে ঘাম ঝরাই, কিন্তু কৃষি অফিসে গেলে বলে ‘নাই’! তাহলে কারা পায় এই প্রণোদনা? আমরা কি কৃষক না?”

তারা জানান, ৫ থেকে ৮ বিঘা জমিতে ধান, তরমুজ, ডাল, শাকসবজি চাষ করেও কৃষি অফিসের কোনো সহায়তা পান না। এমনকি পরামর্শ চাইলে কেউ আসেন না, ফোন ধরেন না।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা. শাহিদা শারমিন আফরোজের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। ভিডিও বা মৌখিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেওয়ার এই অস্বচ্ছ আচরণ প্রশ্ন তোলে—কী লুকাতে চাচ্ছেন এই কর্মকর্তা? রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় প্রণোদনার বাণিজ্য?

ক্ষুব্ধ কৃষকদের অভিযোগ, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে সরকারি প্রণোদনা বিতরণ করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলবাজ, স্বজন ও সুবিধাভোগী মহলকে। অনেকে কৃষি না করেও বরাদ্দ নিচ্ছেন শুধুমাত্র ‘পরিচয়ের জোরে’। এদিকে চাষাবাদে নিঃস্ব কৃষকরা বর্ষা ও রবি মৌসুমে জোগাড় করতে পারছেন না প্রয়োজনীয় উপকরণ।

রাজাপুরের কৃষক সমাজ বলছে, “সরকার কৃষিকে ডিজিটাল করছে, অথচ আমাদের প্রাপ্যটা পাচ্ছি না। কাগজে কোটিপতি, বাস্তবে আমরা ফাঁকা হাতে মাঠে নামি। সরকার কৃষকের পাশে থাকেন—তবে স্থানীয় অফিস কেন আমাদের পেছনে ছুরি চালায়?”

তারা জোর দাবি জানান, এই প্রণোদনা বিতরণে দুর্নীতির তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। কৃষকরা যদি বঞ্চিতই থাকে, তবে এই প্রণোদনার অর্থ শেষ পর্যন্ত কাদের পকেটে যায়—তা জনসমক্ষে আসা উচিত।

সরকার যেখানে কৃষিকে এগিয়ে নিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে, সেখানে রাজাপুরের মতো উপজেলা পর্যায়ে দুর্নীতি আর গাফিলতি পুরো কর্মসূচির উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দুর্নীতির দায় কেউ এড়িয়ে যেতে পারবে না—এখন দরকার নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর জবাবদিহি।
এ বিষয়ে রাজাপুর কৃষি কর্মকর্তা সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় তদন্ত চলছে এ বিষয়ে যাদের জড়িত পাওয়া যাবে তাদের উপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471