জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন তিনটি পৃথক মোবাইল কোর্ট গতকাল ২৬ জুন ২০২৫ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় প্রকারের বিপুল সংখ্যক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থদণ্ড আদায় করা হয়েছে।
জোবিঅ-বন্দর, নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক অভিযান
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) জনাব হাছিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় তিনটি স্পটে অভিযান চালায়। এই অভিযানে মোট ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করা হয়েছে।
কেওডালা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ: অলিম্পিক বিস্কুট গলিতে আনুমানিক ৩০০ চুলার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রায় ৬০ ফুট ২” এমএস পাইপ, ৫০ ফুট ০.৫” হোস পাইপ, ২টি রেগুলেটর এবং ১টি কম্প্রেসর মেশিন অপসারণ করা হয়। অবৈধ বিতরণ লাইনের উৎস সম্পূর্ণভাবে বন্ধ (কিলিং) করা হয়েছে।
মদনপুর বাস স্ট্যান্ড, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ: এই স্পটে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান “হামজা মিষ্টির দোকান” ও “হামজা বেকারী” থেকে মোট ৩৪৫ সিএফটি/ঘন্টা গ্যাস ব্যবহারের জন্য ১,০০,০০০/- টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া, মো. সুরুজ মিয়া (গ্রাহক সংকেত: ১৩৭-২০৫৮১) এর আবাসিক সংযোগ থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গ্যাস ব্যবহারের জন্য আরও ১,০০,০০০/- টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এই স্থান থেকে প্রায় ৩০ ফুট ১” এমএস পাইপ, ৫০ ফুট ৩/৪” জিআই পাইপ, ২০ ফুট ০.৫” হোস পাইপ এবং ৬টি স্টার বার্নার অপসারণ করা হয়েছে। অবৈধ বিতরণ লাইনের উৎস কিলিং করা হয়েছে।
কলাবাড়ী, দেওয়ানবাগ, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ: একটি চুন ফ্যাক্টরিতে আনুমানিক ২০০০ সিএফটি সংযুক্ত লোড সহ প্রায় ২০টি আবাসিক চুলার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রায় ২০০ ফুট ২” ও ২০০ ফুট ১” পানির হোস পাইপ, ১০০ ফুট ১.৫” এমএস পাইপ এবং ২টি রেগুলেটর অপসারণ করা হয়। অবৈধ বিতরণ লাইনের উৎস কিলিং করা হয়েছে।
জোবিঅ-নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক অভিযান
সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, জনাব সিমন সরকার-এর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ শহরে দুটি বড় স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়।
চৌধুরীবাড়ী, আরামবাগ রোড, হরিসেবা মন্দির সংলগ্ন, নারায়ণগঞ্জ: এই এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপিত ৩/৪” বিতরণ লাইনের উৎস পয়েন্ট কিল করা হয়। এই লাইন থেকে প্রায় ২০০টি বাড়ির প্রায় ৬০০ চুলার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
চৌধুরীবাড়ী, আরামবাগ রোড ও চিত্তরঞ্জন পুকুরপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জ: এই স্থানেও অবৈধভাবে স্থাপিত ৩/৪” বিতরণ লাইনের উৎস পয়েন্ট কিল করা হয়। এই লাইন থেকে প্রায় ৮০০টি বাড়ির প্রায় ১৬০০ চুলার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দুটি স্পট মিলিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার অবৈধভাবে স্থাপিত ৩/৪” গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং প্রায় ১৫০০ ফুট ৩/৪” পাইপ ও ৫০০ ফুট প্লাস্টিকের হুজ পাইপ জব্দ করা হয়।
চৌধুরীবাড়ী বাস স্ট্যান্ড: “নিউ আল মেরাজ হোটেল এন্ড বিরিয়ানি হাউজ” (প্রো: মেরাজ গাজী) অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে হোটেল পরিচালনা করায় সংযোগটি কিল করা হয় এবং হোটেল মালিক পক্ষকে ১৫,০০০/- টাকা জরিমানা করা হয়। হোটেলটিতে ৩টি স্টার বার্নার ও ১টি গ্রিল ব্যবহৃত হচ্ছিলো।
তিতাস গ্যাস টি এন্ড ডি পিএলসি (মিরপুর) এর আওতাধীন এলাকায় অভিযান
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মনিজা খাতুনের নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস টি এন্ড ডি পিএলসি-এর আওতাধীন মেঢাবিবি-৬ (মিরপুর) এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযানে সর্বমোট ১০,৬৪১ ঘনফুট/ঘন্টা অবৈধ গ্যাস লোড বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং ২০,০০০/- টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
সুপার জিন্স ওয়াশিং (মিরপুর-১২): ৩৬০০ সিএফটি লোড ব্যবহার করায় সংযোগটি উৎস লাইন থেকে কিল করা হয়েছে। বিভিন্ন আকারের জিআই পাইপ ও হোজ পাইপ জব্দ করা হয়।
প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনাল (আলুব্দি, পল্লবী, মিরপুর): ৩০০০ সিএফটি লোড ব্যবহার করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সার্ভিস লাইন কিল করা হয়েছে। বিভিন্ন আকারের জিআই পাইপ ও হোজ পাইপ জব্দ করা হয়।
সালাম ক্যাটারিং সার্ভিস (আলুব্দি, মিরপুর): ৩৭০ সিএফটি লোড ব্যবহার করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সার্ভিস লাইন কিল করা হয়েছে এবং ১০,০০০/- টাকা জরিমানা করা হয়। ১টি কম্প্রেসর/বুস্টার ও ১টি রেগুলেটর জব্দ করা হয়।
ক্যাফে জনতা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট (আলুব্দি, মিরপুর): ৭১ সিএফটি লোড ব্যবহার করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং ১০,০০০/- টাকা জরিমানা করা হয়। ১টি রেগুলেটর জব্দ করা হয়।
আটলান্টা ফেব্রিকস ইন্টারন্যাশনাল (আলুব্দি ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর): ১২০০ সিএফটি লোড ব্যবহার করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সার্ভিস লাইন কিল করা হয়েছে। জিআই পাইপ জব্দ করা হয়।
নিউ জিন্স ওয়াশিং এন্ড ডাইং (আলুব্দি ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর): ২৪০০ সিএফটি লোড ব্যবহার করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সার্ভিস লাইন কিল করা হয়েছে। জিআই পাইপ জব্দ করা হয়।
এছাড়াও, মিরপুর অভিযানে ১” ইঞ্চি× ১০ ফুট অবৈধ বিতরণ লাইনও অপসারণ করা হয়েছে।
এই অভিযানগুলো অবৈধ গ্যাস ব্যবহার রোধে সরকারের কঠোর অবস্থানেরই প্রতিফলন। অবৈধ সংযোগধারীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।