ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিনিয়ত যাচ্ছে প্রাণ, তবুও থেমে নেই মাদারীপুরে মানবপাচার চক্র

প্রতিনিয়ত যাচ্ছে প্রাণ, তবুও থেমে নেই মাদারীপুরে মানবপাচার চক্র
ইউরোপের স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রতিনিয়তই মাদারীপুর থেকে কিশোর-যুবকেরা পাড়ি জমাচ্ছেন অনিশ্চিত এক যাত্রায়। ইতালি যাওয়ার আশায় কেউ পৌঁছাচ্ছেন গন্তব্যে, কেউ আটকে পড়ছেন লিবিয়ার ভয়ঙ্কর ‘গেম ঘরে’, আবার কেউ চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছেন উত্তাল ভূমধ্যসাগরের বুকে। এর মধ্যেও থেমে নেই মানবপাচারের রমরমা ব্যবসা।
এই অন্ধকার পথে সবচেয়ে আলোচিত নাম রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের পরিমল মল্লিক। স্থানীয় হাইস্কুলের সাবেক গেস্ট টিচার পরিচয়ে পরিচিত হলেও, কয়েক বছর ধরে তিনি একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে তাঁর মাধ্যমে শতাধিক মানুষ অবৈধপথে ইতালি পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। অনেকেই এখনো আটকে আছেন লিবিয়ার গেম ঘরে।

পরিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—তিনি ইতালি পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ২০-২২ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা নিলেও অনেকে পৌঁছাতে পারেননি গন্তব্যে। বরং পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বাড়িঘর বিক্রি করে সন্তানকে মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন।

স্থানীয় একজন গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার মেয়ের জামাইকেও পরিমল মাস্টার ইটালি পাঠিয়েছে। এজন্য আমাদের ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

অভিযোগ রয়েছে, পরিমল মাস্টার বছরে একাধিকবার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভারত যান। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করছেন বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তবে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিমল মল্লিক। তাঁর দাবি, তিনি শুধু প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান এবং স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ভারত নিয়ে যান।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, একজন গেস্ট টিচার কীভাবে এত অর্থ উপার্জন করলেন? ছোট টিনের ঘরে বসবাস করলেও পরিমলের কার্যকলাপ এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত। বিষয়টি জানে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ—তবু কেউ দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাসান বলেন, ‘কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আমরা জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে স্থানীয়দের দাবি, শুধু অভিযোগের অপেক্ষা না করে প্রশাসনের উচিৎ এই চক্রকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে এই অনিশ্চিত যাত্রায় আরও অনেক প্রাণ হারাবে।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

মধ্যরাতে চট্টগ্রামে ছাত্রশিবিরের উপর ছাত্রদল-যুবদলের আক্রমন

প্রতিনিয়ত যাচ্ছে প্রাণ, তবুও থেমে নেই মাদারীপুরে মানবপাচার চক্র

আপডেট সময় ০৬:২৮:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

প্রতিনিয়ত যাচ্ছে প্রাণ, তবুও থেমে নেই মাদারীপুরে মানবপাচার চক্র
ইউরোপের স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রতিনিয়তই মাদারীপুর থেকে কিশোর-যুবকেরা পাড়ি জমাচ্ছেন অনিশ্চিত এক যাত্রায়। ইতালি যাওয়ার আশায় কেউ পৌঁছাচ্ছেন গন্তব্যে, কেউ আটকে পড়ছেন লিবিয়ার ভয়ঙ্কর ‘গেম ঘরে’, আবার কেউ চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছেন উত্তাল ভূমধ্যসাগরের বুকে। এর মধ্যেও থেমে নেই মানবপাচারের রমরমা ব্যবসা।
এই অন্ধকার পথে সবচেয়ে আলোচিত নাম রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের পরিমল মল্লিক। স্থানীয় হাইস্কুলের সাবেক গেস্ট টিচার পরিচয়ে পরিচিত হলেও, কয়েক বছর ধরে তিনি একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে তাঁর মাধ্যমে শতাধিক মানুষ অবৈধপথে ইতালি পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। অনেকেই এখনো আটকে আছেন লিবিয়ার গেম ঘরে।

পরিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—তিনি ইতালি পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ২০-২২ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা নিলেও অনেকে পৌঁছাতে পারেননি গন্তব্যে। বরং পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বাড়িঘর বিক্রি করে সন্তানকে মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন।

স্থানীয় একজন গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার মেয়ের জামাইকেও পরিমল মাস্টার ইটালি পাঠিয়েছে। এজন্য আমাদের ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

অভিযোগ রয়েছে, পরিমল মাস্টার বছরে একাধিকবার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভারত যান। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করছেন বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তবে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিমল মল্লিক। তাঁর দাবি, তিনি শুধু প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান এবং স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ভারত নিয়ে যান।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, একজন গেস্ট টিচার কীভাবে এত অর্থ উপার্জন করলেন? ছোট টিনের ঘরে বসবাস করলেও পরিমলের কার্যকলাপ এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত। বিষয়টি জানে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ—তবু কেউ দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাসান বলেন, ‘কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আমরা জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে স্থানীয়দের দাবি, শুধু অভিযোগের অপেক্ষা না করে প্রশাসনের উচিৎ এই চক্রকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে এই অনিশ্চিত যাত্রায় আরও অনেক প্রাণ হারাবে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471