ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমার ছেলের বুকে গুলি করে বিএসএফ মারলো কেন?

সীমান্তে নিহত সাইদুলের মা-বাবার আর্তনাদ

আমার ছেলের বুকে গুলি করে বিএসএফ মারলো কেন? জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ

আমার ছেলের বুকে গুলি করে মারলো কেন বিএসএফ? কি তার অপরাধ? বাংলাদেশের ভেতর ঢুকে গুলি করছে তারা। সন্ধ্যাবেলা নিজের গরু মাঠ থেকে আনতে গিয়েছিল আমার ছেলে। আমার ছেলে আর ফিরে পাবো না।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী (বিএসএফ)-এর গুলিতে যুবক ছেলেকে হারিয়ে শোকে মাতম সাইদুলের বাবা জয়নাল আবেদীন ও মা নূরজাহান বেগম।

বুধবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গামারিতলা সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে গুলি করে কৃষক সাইদুলকে (২০) হত্যা করে বিএসএফ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইদুলকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাইদুলের বাবা জয়নাল আবেদীন জানান, আমি বাজারে ছিলাম। একটু দেরি হওয়াতে আমার ছেলে সাইদুল সন্ধ্যায় গামারিতলা সীমান্ত সংলগ্ন মাঠ থেকে নিজেদের গরু আনতে যায়। এসময় ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে আমার ছেলেকে গুলি করে মারে।

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমাদের গ্রাম। সীমান্তে আমাদের জমিজমা আছে। গরু চড়াই। কিন্তু বিএসএফের কারণে জমি চাষ করতে পারি না। গরু চড়াইতে পারি না। অনেক অত্যাচার করে আমাদের। এর আগেও একবার মানুষকে গুলি করে মেরেছে। এইবার আমার ছেলেকে বুকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি তার বিচার চাই।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়,সাইদুল ভারতে সুপারি পাচারের সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সুপারি ভারতে পাচার নয়,সাইদুল সীমান্তে নিজের গৃহপালিত গরু আনতে গিয়েছিলেন। এসময় কাঁটাতারে বেড়ার এপারে এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বিএসএফ সাইদুলকে গুলি করে হত্যা করে। সীমান্তে গিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফের বুটের ছাপ পাওয়া যায়। কাটা ধান খেতের ন্যাড়ায় এখনও লেগে আছে রক্তের দাগ। তাকে যেখানে হত্যা করা হয় সেটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন,বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে গুলি করে বিএসএফ। প্রথম গুলি তার গায়ে লাগেনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গুলি তার বুকে পিটে লাগে। এতেই তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও বলেন,গত ৩/৪ মাস ধরে বিএসএফ আমাদের বড় নির্যাতন করছে। বাংলাদেশ ঢুকে তারা গরু নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই স্থানে তারা অন্য একজন কৃষককেও হত্যা করেছিল।

নিহতের বোন জমিলা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ইন্ডিয়ান বিএসএফ আমার ভাইকে মেরেছে। দেশের ভিতর ঢুকে তারা কি করে গুলি করে। কোনো বিচার নেই। সরকার কিছু বলে না। এ দেশে থাকবো কেমনে?

এদিকে সাইদুলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হলে পুরো এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাজারও মানুষ আসেন তাকে শেষ বিদায় জানাতে। এসময় তারা সাইদুল হত্যার বিচার দাবি করেন। সরকারের তরফ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বাদ আসর গামারিতলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষ সাইদুলকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, এ ঘটনায় বিএসএফকে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হয়েছে।

ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত

আজ চাঁদপুরের অর্ধশতাধিক গ্রামে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা

আমার ছেলের বুকে গুলি করে বিএসএফ মারলো কেন?

আপডেট সময় ১২:২৮:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

সীমান্তে নিহত সাইদুলের মা-বাবার আর্তনাদ

আমার ছেলের বুকে গুলি করে বিএসএফ মারলো কেন? জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ

আমার ছেলের বুকে গুলি করে মারলো কেন বিএসএফ? কি তার অপরাধ? বাংলাদেশের ভেতর ঢুকে গুলি করছে তারা। সন্ধ্যাবেলা নিজের গরু মাঠ থেকে আনতে গিয়েছিল আমার ছেলে। আমার ছেলে আর ফিরে পাবো না।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী (বিএসএফ)-এর গুলিতে যুবক ছেলেকে হারিয়ে শোকে মাতম সাইদুলের বাবা জয়নাল আবেদীন ও মা নূরজাহান বেগম।

বুধবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গামারিতলা সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে গুলি করে কৃষক সাইদুলকে (২০) হত্যা করে বিএসএফ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইদুলকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাইদুলের বাবা জয়নাল আবেদীন জানান, আমি বাজারে ছিলাম। একটু দেরি হওয়াতে আমার ছেলে সাইদুল সন্ধ্যায় গামারিতলা সীমান্ত সংলগ্ন মাঠ থেকে নিজেদের গরু আনতে যায়। এসময় ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে আমার ছেলেকে গুলি করে মারে।

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমাদের গ্রাম। সীমান্তে আমাদের জমিজমা আছে। গরু চড়াই। কিন্তু বিএসএফের কারণে জমি চাষ করতে পারি না। গরু চড়াইতে পারি না। অনেক অত্যাচার করে আমাদের। এর আগেও একবার মানুষকে গুলি করে মেরেছে। এইবার আমার ছেলেকে বুকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি তার বিচার চাই।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়,সাইদুল ভারতে সুপারি পাচারের সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সুপারি ভারতে পাচার নয়,সাইদুল সীমান্তে নিজের গৃহপালিত গরু আনতে গিয়েছিলেন। এসময় কাঁটাতারে বেড়ার এপারে এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বিএসএফ সাইদুলকে গুলি করে হত্যা করে। সীমান্তে গিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফের বুটের ছাপ পাওয়া যায়। কাটা ধান খেতের ন্যাড়ায় এখনও লেগে আছে রক্তের দাগ। তাকে যেখানে হত্যা করা হয় সেটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন,বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে গুলি করে বিএসএফ। প্রথম গুলি তার গায়ে লাগেনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গুলি তার বুকে পিটে লাগে। এতেই তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও বলেন,গত ৩/৪ মাস ধরে বিএসএফ আমাদের বড় নির্যাতন করছে। বাংলাদেশ ঢুকে তারা গরু নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই স্থানে তারা অন্য একজন কৃষককেও হত্যা করেছিল।

নিহতের বোন জমিলা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ইন্ডিয়ান বিএসএফ আমার ভাইকে মেরেছে। দেশের ভিতর ঢুকে তারা কি করে গুলি করে। কোনো বিচার নেই। সরকার কিছু বলে না। এ দেশে থাকবো কেমনে?

এদিকে সাইদুলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হলে পুরো এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাজারও মানুষ আসেন তাকে শেষ বিদায় জানাতে। এসময় তারা সাইদুল হত্যার বিচার দাবি করেন। সরকারের তরফ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বাদ আসর গামারিতলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষ সাইদুলকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, এ ঘটনায় বিএসএফকে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হয়েছে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/krishanmajhee/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471