সম্পাদকীয়
২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আদলে আয়োজিত হচ্ছে ক্লাব ফুটবলের সর্ববৃহৎ আসর—ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ৩২টি ক্লাবকে নিয়ে এই আয়োজন নিঃসন্দেহে ফুটবল ইতিহাসে এক সাহসী মাইলফলক। কিন্তু এ উদ্যোগকে ঘিরে যেমন উচ্ছ্বাস রয়েছে, তেমনি রয়েছে জিজ্ঞাসা ও শঙ্কাও।
ফিফা দাবি করছে, এই টুর্নামেন্ট বিশ্ব অর্থনীতিতে ২১ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্রেই তা হবে ৯.৬ বিলিয়ন। পুরস্কারমূল্য ১ বিলিয়ন ডলার, যা উন্নয়নশীল দেশের ক্লাবগুলোর জন্য এক বিশাল প্রণোদনা। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এটি কি কেবল অর্থের জন্যই?
টুর্নামেন্টের ঠিক আগে পর্যন্ত অনেক ম্যাচের টিকিট অনলাইনে অবিক্রীত রয়ে গেছে। উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ সমর্থকদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ফিফার আয় ও জনপ্রিয়তার অনুমান হয়তো বাস্তবের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না।
আরেকটি বড় উদ্বেগ হচ্ছে খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক চাপ। ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর অনেক খেলোয়াড়ই বছরে ৫০–এর বেশি ম্যাচ খেলছেন। এরপর আবার জাতীয় দলের দায়িত্ব। ক্লাব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ মানে আরও ম্যাচ, আরও ভ্রমণ, আরও চাপ। বিশ্বখ্যাত সাবেক ফুটবলাররাও বলছেন—সময় এসেছে ফুটবলের ক্যালেন্ডার নিয়ে নতুন করে ভাবার।
ক্রীড়া দিক থেকে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার ক্লাবগুলো এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে বিশ্বদরবারে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর তুলনায় বাজেট ও দলগত মানে বড় ফারাক রয়েছে। ফলে টুর্নামেন্টে একতরফা আধিপত্য দেখা গেলে সেটি ভবিষ্যতের জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলতে পারে।
তবুও, এই টুর্নামেন্টে কিছু আশার আলো আছে। এটি ক্লাব ফুটবলের জন্য একটি বৈশ্বিক মঞ্চ তৈরি করেছে, যেখানে মেসির ইন্টার মিয়ামি যেমন খেলছে, তেমনি মিশরের আল আহলি কিংবা জাপানের উরাওয়া রেড ডায়মন্ডসের মতো দলও বিশ্বদর্শকের সামনে আসছে। এটি খেলাটিকে আরও বৈচিত্র্যময় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক করতে সাহায্য করতে পারে।
তবে এই উদ্যোগকে টেকসই করতে হলে ফিফাকে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য, সমর্থকদের সাধ্য ও বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতার ভারসাম্য সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। শুধুমাত্র আয় বা প্রচার নয়—ফুটবলের আত্মা রক্ষা করাটাই হওয়া উচিত ফিফার প্রধান লক্ষ্য।
২০২৫–এর ক্লাব বিশ্বকাপ সফল হলে ভবিষ্যতে ক্লাবগুলো হয়তো জাতীয় দলের মতো গর্ব করে জার্সিতে তারকা লাগাবে বিশ্বজয়ের স্মারক হিসেবে। কিন্তু সফলতার মূল্য যদি হয় ক্লান্ত খেলোয়াড়, খালি গ্যালারি আর বৈষম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা—তাহলে এই সাহসী উদ্যোগই পরিণত হতে পারে এক চরম শিক্ষা হিসেবে।