৪ জুন, ২০২৫: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) প্রশাসনিক ও আর্থিক অচলাবস্থা চরমে পৌঁছেছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এমন অবস্থায় আসন্ন ঈদুল আযহার ঠিক এক সপ্তাহ আগে বেতন ও উৎসব ভাতা না পেয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কুয়েটের প্রায় ১,১০০ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
গত ২২ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী কুয়েট শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মুখে পড়ে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত ‘অভিভাবকহীন’ হয়ে পড়ে। প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী, উপাচার্য ছাড়া কোনো আর্থিক বিল অনুমোদন করা সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের মে মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস এখনও অনিশ্চিত হয়ে আছে।
এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঁইয়া গত ২৯ মে চ্যান্সেলর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, উপাচার্য পদ শূন্য থাকায় সকল আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অতএব, জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে অন্ততপক্ষে বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধের অনুমোদন প্রদানের জন্য প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রদান করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, তারা একদিকে বেতন পাচ্ছেন না, অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। রোববার (১ জুন) দুপুরে ‘দুর্বার বাংলা’ চত্বরে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “শুধু আমাদের পরিবার নয়, আমাদের সঙ্গে জড়িত হাজারো মানুষ এই সংকটে পড়েছেন। ঈদের সময় হাতে টাকা না থাকলে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো অসম্ভব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আনিছুর রহমান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানান, “উপাচার্য ছাড়া কোনো বিল অনুমোদন সম্ভব নয়, তাই আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় আছি।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) নুরুন আখতার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চায়, আমরা অবশ্যই সমাধানের চেষ্টা করব।”
অচলাবস্থার কারণে শুধু শিক্ষক-কর্মচারীরাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও। ঈদুল ফিতরের আগে থেকে শুরু হওয়া ছুটি, চলমান আন্দোলন ও একের পর এক প্রশাসনিক সংকটে কুয়েটে গত ১০৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা।
গতকাল (৩ জুন) থেকে শুরু হওয়া ঈদুল আযহার ছুটিতে ক্যাম্পাস আবারও বন্ধ হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ কার্যত ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল,যুবদল ও স্থানীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ শীর্ষ প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়।
১ মে চুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি ১৯ মে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন এবং শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মুখে পড়ে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে কুয়েট কার্যত ‘অভিভাবকশূন্য’ অবস্থায় রয়েছে। সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠনের আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও আর্থিক লেনদেন কবে স্বাভাবিক হবে—তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।