নয়ন হোসেন
হরিপুর (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে কুটিরশিল্পের শতাধিক পরিবারের জীবন জীবিকা চলে পানি মুথা নামে এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরী পাটি বিক্রি করে। পাটি তৈরির মূল উপকরণ মেলে মুথা সংকটের কারণে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে পানি মুখা। এসব জলজ উদ্ভিদ জন্মায় খাল-বিল ও জলাশয়ে।
কৃষকের নিকট থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয় এসব পানি মুথা। তা দিয়ে পাটি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে সুখে দুঃখে চলে তাদের জীবন জীবিকা। আর এ শিল্পকে পুঁজি করেই চলে তাদের জীবন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় পানি মুথা দিয়ে তৈররি পাটি অন্যান্য পাটির চেয়ে দামে সস্তা হলেও শয্য হিসেবে অনেক আরামদায়ক ও শীতল। হরিপুর উপজেলার আমগাঁও, জামুন গ্রামে ৪০ বছর পূর্ব থেকে শুরু হয়েছে মেলে মুথা দিয়ে পাটি তৈরির কাজ। কিন্তু দিন দিন মেলে মুথা বিলুপ্ত হওয়ায় জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি এ শিল্পকে বাঁচাতে বিকল্পভাবে পানি মুথা নামে এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ (ঘাস) দিয়ে ১০-১৫ বছর থেকে শুরু করেছে পানি মুথা দিয়ে পাটি বুনার কাজ।
এ কাজের মাধ্যমে অনেকে খুঁজে পেয়েছে তাদের চলার পথ। পাটি বিক্রির উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলছে এসব পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়াসহ সংসারের ভরণ পোষণের খরচ। এলাকাবাসী জানান, পানি মুথা ঘাস জাতীয় এক শ্রেণির জলজ উদ্ভিদ যা খাল, বিল ও নুনার জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায়।প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিন মাস থেকে পানি মুথা সংগ্রহ করা হয়।
পাটি তৈরির কারিগর জানান, মুথা কাটার পর পাটি তৈরির জন্য রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাড়িতে শান মেশিনে পাটের চিকন দড়ির সাহায্যে পাটি বানানো হয়। এতে দুজন শ্রমিক বা কারিগরের প্রয়োজন হয়। আর এভাবেই পাটি তৈরি করে বাজার জাত করা হয়।
হরিপুর থানার আমগাঁও গ্রামের হায়দার আলী জানান, আগে নিজে আবাদ করে মেলে মুথা দিয়ে পাটি তৈরি করতাম কিন্তু দিন দিন সার বিষসহ মুথা আবাদের সব কিছু দাম বেশি হওয়ার ফলে মেলে মুথার চাষে অনেকই আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে বিলুপ্তির পথে এ শিল্পের প্রকৃত উপকরণ। তাই জীবন সংসার বাঁচাতে আমরা প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া পানি মুথা দিয়ে পাটি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। একটি বড় মাপের পাটি তৈরিতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মাঝারি ও ছোট আকারের পাটিতে খরচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বড় পাটি বাজারে বিক্রি করি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাঝারি পার্টি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এটি একটি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প। এই শিল্পকে বাচাঁতে ও তাদের সহযোগিতার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।