ববি প্রতিনিধি :
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়(ববি)এর শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য একমাত্র ক্যাফে হলো কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। কিন্তু কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম ও মান নিয়ে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।শিক্ষার্থীরা জানান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে খাবারের মূল্য অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মূল্যের চেয়ে বেশি এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইরের খাবারের দোকানগুলোর থেকেও বেশি ।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানও তেমন ভালো না এবং পাশাপাশি অনেক সময় খাবারে বিভিন্ন ধরনের পোকাও পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কোন খাবারের কত মূল্য সেটার জন্য একটা মূল্য তালিকা পর্যন্ত নেই ক্যাফেটেরিয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাব্বি ভুইঁয়া বলেন,”বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাজারো ব্যস্ততার মধ্য যখন তাদের ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হয় তখন ক্যাফেটেরিয়ার খাবার ই যেন সেই ক্লান্ত মুখে হাঁসি ছায়া এনে দেয়।কিন্তু যদি সেই খাবার হয় খাওয়ার অনুপযোগী এবং খাবার যদি থাকে পোকার সমারাহ তাহলে সেই ক্লান্ত শরীর যেন নিমিষেই বেদনার বিষে নীলাভ হয়ে যাই,হাসি পরিণত হয় দুঃখে।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার ই যেন শিক্ষার্থীদের জন্য তেমন ই একটি দুঃখের কারণ।এখান ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাবার খেতে আসলেই দেখা মেলে খাবার মধ্যে বিভিন্ন পোকার বাসস্থান।এছাড়া খাবারের দাম ও আকাশচুম্বী।খাবার দাম যেমন বেশি, খাবার মান টা যেন ঠিক তত টা বাজে।এমন খাবার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ার যেন হয়ে উঠেছে নষ্ট খাবারে ব্যবসায়ী আড়ৎ।”
অন্য এক শিক্ষার্থী ইফতেখার সায়েম বলেন,”ক্যাফেটেরিয়ার ওয়াশরুম ও কিচেন দুটিই অস্বাস্থ্যকর। এই ওয়াশরুমে তো একবার গেলে দ্বিতীয়বার আর হয়তো কেউ যেতে চাইবে না। এগুলো খুব ইমার্জেন্সি না হলে কেউ ব্যবহার করতে চায় না। কিচেন অস্বাস্থ্যকর হওয়াতে খাবারে পোকামাকড় দেখা যায় মাঝেমধ্যে এবং এসব ব্যাপারে যখন নিউজ হয় তখন সারা বাংলাদেশ দেখে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানি হয়। খাবারগুলোর মান তুলনামূলকভাবে খারাপ ও দাম বেশি হওয়াতে এটাকে শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হয় না। তাছাড়া এখানে খাবারের মেনু বাড়ানো উচিত যেন শিক্ষার্থীরা রুচি অনুযায়ী একাধিক চয়েস করার সুযোগ পায়। আরেকটি উল্লেখ্য বিষয় হলো নারীদের জন্য আলাদা বসার স্থানটির পরিচর্যা কম হয়। আমি মনে করি এসবের দিকে খেয়াল দেয়া উচিত।”
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিভিন্ন খাবার দোকানে যে মুরগির মাংসের মূল্য ৩৫ টাকা, ক্যাফেটেরিয়া তা ৪০ টাকা। মাছের ক্ষেত্রেও দাম বাইরের থেকে কিছুটা বেশি। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে বাসি খাবারও পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাফেটেরিয়ায় যে রোল ১০ টাকায় বিক্রি তার সাইজ অনুযায়ী ১০ টাকা দাম হয় না।
খাবারের মূল্য তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক মোঃমামুন জানান,” নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি ব্যাতিত মূল্য তালিকা হয় না, মূল্য তালিকা করার জন্য আমি উপর মহলের কাছে দরখাস্ত করেছি অনেক আগেই কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পাই নি।”
খাবারের মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান,”সারাদেশে সকল পন্যের দাম বেশি তাই ক্যাফেটেরিয়ার কিছু কিছু খাবারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্যাঁ, আমি জানি ক্যাফেটেরিয়ার বাইরে বিভিন্ন খাবারের দোকানে খাবারের দাম ক্যাফেটেরিয়ার চেয়ে কম,কারন তাদের কর্মচারী নেই, তারা নিজেরা ব্যাবসা পরিচালনা করে তাই তাদের পরিচালনা খরচ কম।অন্যদিকে আমার এখানে কয়েকজন কর্মচারী কাজ করে, তাদের বেতন দিতে হয়,তাই পরিচালনা খরচ বেশি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাই খাবারের মূল্যও একটু বেশি রাখা হয় ।
পাশাপাশি তিনি অসাস্থকর খাবার পরিবেশন সম্পর্কে বলেন,”এখানে একসাথে অনেক খাবার রান্না হয়,হয়তোবা মাঝে মাঝে কিছু পোকা উড়ে এসে খাবার ভিতরে পরে কিন্তু আমরা সেটা লক্ষ্য করি না।আমাদের অগোচর এরকম অপ্রত্যাশিত বিষয় টি ঘটেছে। ”
এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)এর পরিচালক ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মোঃতরিকুল হক এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন,” বর্তমানে ক্যাফেটেরিয়া যার ইজারায় রয়েছে তার ইজারাকৃত সময় শেষ। নতুন ভাবে ইজারা দেওয়াটা একটু সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করতে। কিছু সমস্যার কারনে আমাদের ইজারার বিষয় টি হ্যান্ডেল করতে একটু সময় লাগছে।তবে আমরা ফাইল রেডি করে ভিসি স্যারের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। ভিসি স্যার সাইন করলেই আমরা নতুন ইজারার জন্য বিজ্ঞাপ্তি দিবো।”
মূল্য তালিকা সম্পর্কে তিনি বলেন,”আমি তাকে(মামুন)কে বলেছি মূল্য তালিকা টাঙিয়ে দিতে কিন্তু তিনি এখনো দেননি।আমি এ বিষয় তার সাথে কথা বলছি।”
খাবারের দাম সম্পর্কে তিনি জানান,” বর্তমানে যে টেন্ডার নিয়েছেন তার সময় শেষ, আমরা তাকে নতুন টেন্ডার পাওয়া পর্যন্ত রেখেছি কোনো চুক্তি ছাড়া তাই তার মূল্য নির্ধারণে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারছি না।আমরাও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি যে সেখানে খাবারের দাম অনেক কম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার তুলনায়। তারা কিভাবে করে আমি জানি না,তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তুকি দেয় কিনা।আমাদের ছোট বিশ্ববিদ্যালয়, বাজেটও কম।তবে নতুন টেন্ডার পেলে আমরা চেষ্টা করবো খাবারের মানটা ঠিক রেখে দাম কমানোর।”