পাবনা ব্যুরো চিপ:
পাটকে এক সময় সোনালী আঁশ বলা হত। বাংলাদেশে পাট প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবে বিবেচিত হতো। সারা পৃথিবীতে পাট পাট জাত পণ্য রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা এদেশের আয় হত এবং নিজের দেশের সমস্ত চাহিদা মেটাতো, পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় সারা পৃথিবীতে এর ব্যাপক চাহিদা ছিল। বাংলাদেশের সেই স্বর্ণযুগের কথা আমাদের এখনো মনে পড়ে, আমরা ছোটবেলায় পাটের রচনা লিখতাম, এই সোনালী আশের বিবরণ দিতে গিয়ে বুকটা গর্বে ভরে যেত অথচ সেই মূল্যবান সম্পদ আমরা ধরে রাখতে পারিনি। আমাদের দেশ থেকে পাট এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে, পাট চাষ লাভবান হওয়া সত্বেও প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যার কারণে কৃষক এই চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পাবনাতে এখনো ক্ষুদ্র আকারে প্রান্তিক চাষীরা তার নিজ প্রয়োজনে অল্প পরিসরে পাট চাষ করে থাকে। পাট কেটে বেশ কিছুদিন পানিতে দাগ দিয়ে পচানো হয়, সেই পঁচানো প্রক্রিয়ার জন্য ভাসমান পানি থাকতে হয়। আগে প্রতিটা গ্রামে বিল, হাওর, জোলা, ক্যানাল ইত্যাদিতে পানির প্রবাহ থাকতো আর এই প্রবাহমান পানিতে পাটজ্যাক দেওয়ার উপযুক্ত স্থান। জেলার সমস্ত গ্রামের যত বিল ছিল, বিলের প্রত্যেকটা মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকের পাটজ্যাক দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাই ক্ষেত থেকে পাট কেটে উপরে বসে পাট ছিলে আশপাশের নোংরা ডোবাতে ডুবিয়ে রেখে জাক দেওয়া হয়, ফলে ওই পাটের মান গুণগত হয় না কালারও সুন্দর হয় না। আমার জানামতে পাবনা জেলায় এখনো অনেক বিল আছে কিন্তু বিলের পানি বের হওয়ার রাস্তা নাই। মরহুম প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকারের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সাড়া জেলা ব্যাপী ক্যানাল কেটে সেচ প্রকল্পর আওতায় এনে ইরিগেশন করা হয়, সেই সেচ প্রকল্পও স্থবির হয়ে গেছে যে যার মত দখল করে কেনালের মাথায় বাদ দিয়ে বন্ধ করে রাখায় বিলের পানির প্রবাহ বন্ধ আছে। একসময় জানতাম কৃষি প্রধান এই বাংলাদেশ, কৃষি নির্ভর দেশ হয়ে আমরা নিত্য পণ্য বিভিন্ন দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকি।বাংলাদেশে এখনো যত আবাদি জমি আছে সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা করলে এদেশের কৃষক আবার ঘুরে দাঁড়াবে। পাট ও পাট জাতপন্য এখনো নিজের দেশ সহ সারা পৃথিবীতেই এর চাহিদা আজীবন রয়ে যাবে। সারা পৃথিবীর চেয়ে বাংলাদেশেই পাটজাত পণ্য বেশি ব্যবহার হত, নিজেদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য হলেও এই পাটকে বিলুপ্তের পর থেকে রক্ষা করতে হবে এটাই বিশেষজ্ঞদের মতামত। আশপাশের প্রান্তিক চাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় তাদের পাট প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগ সুবিধা করে দিলে অর্থাৎ পানির প্রবাহের ব্যবস্থা করে দিলে তারা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। সামনের যে পরিমাণে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে খাদ খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে আর বেশি সময় লাগবে না তাই সরকারের প্রতি আহ্বান কৃষকের সমস্ত উপকরণ সমূহের ব্যবস্থা করে দিয়ে কৃষককে কৃষি নির্ভর করে তুলুন। কৃষি বাসলে কৃষক বাসলে এটাই সঠিক এটাই বাস্তব। কোটি কোটি টাকা কিছু সম্প্রসারণ কৃষি অধিদপ্তর গবেষণা কেন্দ্রের জন্য কোটিকরে কোটি টাকা ব্যয় ব্যয় করা হয়, বিনিময়ে আমাদের চোখে দৃশ্যমান কিছুই দেখতে পাই না। সেই সাথে কৃষি কর্মচারী কর্মকর্তাদেরকেও অনুরোধ করছি আপনারা কৃষক বান্ধব হন কৃষক কে বাঁচান দেশকে বাঁচান প্রত্যেকটা উপজেলা জেলাতে অনেকগুলো মার্চ সুপারভাইজারকে বেতন দিয়ে পোষা হয় তাদের কাজ হল মাঠে মাঠে যেয়ে কৃষকের ফসলের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য অথচ দুঃখের বিষয় হলেও সত্য কোন মাঠ সুপারভাইজার কোনদিনও কোন মাঠে খোঁজ খবর নিতে যায় না এটাই হলো বাংলাদেশ।
আলাউদ্দিন বিন কাশেম।
পাবনা।
“পাট চাষের হারানো গৌরব ও কৃষকের বাঁচার লড়াই”
-
আলাউদ্দিন বিন কাশেম
- আপডেট সময় ০৭:১৫:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
- ৯ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
সর্বাধিক পঠিত