মনোয়ারুল ইসলাম রংপুর জেলা:
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চায়না ক্লে পাউডার আমদানির নামে দেশে আনা হচ্ছিল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ভায়াগ্রার কাঁচামাল। এ ঘটনায় দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যক্তিগত জরিমানা করেছে রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। একইসাথে পুরো চালানটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘উজালা পেইন্ট ট্রেডিং কোং’ গত ১ আগস্ট ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চায়না ক্লে পাউডার (রাবার গ্রেড) বা কাওলিন ক্লে আমদানির ঘোষণা দেয়। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্মকর্তারা চালানটি আটক করে। পরে কায়িক পরীক্ষায় দেখা যায়, এক হাজার ১১৪টি বস্তার মধ্যে বিশেষ কায়দায় প্রায় ১৬ হাজার কেজি ওষুধের কাঁচামাল লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি ডি.আর.বি নিউজকে নিশ্চিত করেছে রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার অরুণ কুমার বিশ্বাস।
রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার অরুণ কুমার বিশ্বাস জানান, ৩৭ ধরনের ওষুধের কাঁচামালের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও আমদানি নিয়ন্ত্রিত পাঁচ হাজার ৮০৫ কেজি সিলডেনাফিল সাইট্রেট পাওয়া যায়, যা ‘ভায়াগ্রা’ নামে পরিচিত।
জানা যায়, যেসব বস্তার ভেতরে ওষুধের প্যাকেট পাওয়া গেছে, সেগুলোর ওপর বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছিল। চালানটি আটকের পর নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় এবং রিপোর্টে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি এক কোটি ৪৭ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি।
গত ১৪ অক্টোবর রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এই ঘটনায় রায় প্রদান করে। এতে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং সম্পূর্ণ চালানটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। বাজেয়াপ্ত করা এসব ক্ষতিকর কাঁচামাল নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার অরুণ কুমার বিশ্বাস, ‘ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আমদানি করায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চালানটি (ওষুধের কাঁচামাল) রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।’ কেননা ভায়াগ্রা এক ধরনের ক্ষতিকর মাদক। এই বিপুল পরিমাণ ভায়াগ্রা দেশের মধ্যে প্রবেশ করলে, তা দিয়ে বিপুল পরিমাণ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু তৈরি হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগুলো ধ্বংস করা হবে। একটি প্রক্রিয়া অনুসরণের অপেক্ষায় আছি। যাতে আগামীতে এই ধরনের কোনো কিছু দেশে প্রবেশ না করে, এ জন্য দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সিলডেনাফিল সাইট্রেট হচ্ছে ভায়াগ্রার সক্রিয় উপাদান। যা সাধারণত ২৫ মিলিগ্রাম, ৫০ মিলিগ্রাম ও ১০০ মিলিগ্রাম ডোজে ট্যাবলেট আকারে বিক্রি হয়। সেই হিসেবে এককেজি সমান এক হাজার গ্রাম। এক হাজার গ্রাম সমান ১০ লাখ মিলিগ্রাম। ২৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট হলে এক কেজি ভায়াগ্রা দিয়ে ৪০ হাজার ভায়াগ্রা বানানো সম্ভব। একইভাবে এক কেজি ভায়াগ্রা দিয়ে ৫০ গ্রামের ২০ হাজার ও ১০০ গ্রামের ১০ হাজার ট্যাবলেট বানানো সম্ভব। হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ হাজার ৮০৫ গ্রাম ভায়াগ্রা দিয়ে ২৫ মিলিগ্রামের ২৩ কোটি ২২ লাখ ট্যাবলেট বানানো সম্ভব। একইভাবে ৫০ মিলিগ্রামের ১১ কোটি ৬১ হাজার ও ১০০ মিলিগ্রামের পাঁচ কোটি ৮০ লাখ ট্যাবলেট বানানো সম্ভব।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জব্দ করা বিপুল পরিমাণ ভায়াগ্রার কাঁচামাল দিয়ে কোটি কোটি ট্যাবলেট তৈরি করা সম্ভব ছিল, যা দেশের যুবসমাজের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে
নিজস্ব সংবাদ : 





















