চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি :
১৮৯৬ সালের ১লা অক্টোবর চাঁদপুর” গ “শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে এটি “ক”শ্রেণির পৌরসভায় রুপান্তরিত হয় । প্রতিষ্ঠার শুরুতে সেবার মান ভালো থাকলেও স্বাধীনতার পর সেবার মান ধরে রাখতে পারেনি শত বছরের পুরনো এই পৌরসভাটি। দেশের আভ্যন্তরে যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে।সেই সাথে তাল মিলিয়ে চাঁদপুর পৌরসভার বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন হয়ে থাকলেও চাঁদপুর পৌরবাসীর কষ্ট লাগবে তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা পৌর কতৃপক্ষ। বিশেষ করে পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের নিউ আলিম পাড়া প্রতাপ সাহা রোড বিগত ২৫ থেকে ৩০ বছর পৌর কতৃপক্ষের কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তার পুরোনো আস্তর উঠে নীচের সব পাথর গুলোও মাটিথেকে সর গিয়েছে। তাই এখন রাস্তা উঁচু নিচু হয়ে বিভিন্ন যাগায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক যাতায়াত করা অনেক কষ্টসাধ্য। এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রতাপ সাহা জমিদার বাড়ি, চাঁদপুর প্রথম শ্রেনীর আবহাওয়া অফিস, কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। বিগত সময়ে চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে দায়িত্ব পালন কারী ইউসুফ গাজী, শফিকুর রহমান ভূইয়া,নাছির উদ্দিন আহমেদ সর্বশেষ জিল্লুর রহমান জুয়েল সহ কারো সময়ই এই সড়কটির কোন উন্নয়ন হয়নি। এখানে বসবাস কারী লোকজন যারা আছেন তাদের সকলের চলাচলের খুবই কষ্ট হচ্ছে। স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী ক্যাম্পাস এই এলাকাতেই অবস্থিত। স্কুল ছুটির পর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই রাস্তা দিয়ে মিশন রোড ও ট্রাক রোডে যাতায়াত করে। অনেক সময় দেখা যায় রাস্তা উঁচু নিচুর কারণে স্কুল পুড়ুয়া ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধ বয়সের লোক জন পা পিছলে পরে যান। কখনো কখনে রিক্সা উল্টিয়ে পরে যার কারণে এই রোডে কোন রিক্সা ঢুকতে চায়না,আর ঢুকলেও বেশী
টাকা দাবি করে।
এলাকার কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানাযায় এই সড়ক টির কিছু অংশ নিয়ে আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে সীমানা নিয়ে আদালতে একটি মামলা ছিলো যার কারণে এব্যাপারে কেউ সফল হতে পারেনি। আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় বাসিন্দার মধ্যে সীমানা নিয়ে বিরোধ থাকায় ২৯১০ সালে হাইকোর্টে একটি মামলা হয় যা ২০২২ সালে রায়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষে আসে। ২০২১ সালে গণপূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাই কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির হস্তক্ষেপের কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন আবহাওয়া অফিস, জেলা প্রশাসক, পৌর প্রশাসক ও এলাকাবাসী সহ এক সাথে বসে একটা সুষ্ঠ সমাধান করা সম্ভব। মামলার বাদী রেজাউল করীম জানান যেহেতু আমরা মামলায় হেরে গেছি তাই আবহাওয়া অফিস এলাকাবাসীর চলাচলের রাস্তার সীমানা পূর্ণনির্ধারণ করে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এলাকার বাসিন্দা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা সরকার বলেন যেহেতু মামলার রায় আবহাওয়া অফিসের পক্ষে হয়েছে, তাই আমি মনেকরি আবহাওয়া অফিসের যায়গার ভিতর দিয়ে এলাকাবাসীর পানির লাইন ও গ্যাস সংযোগের লাইন রয়েছে আবহাওয়া অফিসের উচিত এই লাইন গুলোর একটা ব্যবস্থা করা এবং সীমানা পূর্ণনির্ধারন করে জনগনের চলাচলের রাস্তার ব্যবস্থা করে। সাবেক মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল নির্বাচিত হওয়ার পর আবহাওয়া অফিস মাঠে এলাকা বাসির এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কথা দিয়ে ছিলো, আমি আপনাদের কাছ থেকে দুইবছর সময় সময় নিলাম আশাকরি দুই বছর পর এই রাস্তাটি অবশ্যই সংস্কার করে দিবো। কিন্তু জুয়েল তার কথা রাখতে পারেনি। আমরা এলাকা বাসী কয়েক বার পৌর কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি কোন কাজ হয়নি।
এলাকার সবচেয়ে পুরনো বসতি স্থাপন কারী মরহুম আলতাফ হোসেন তালুকদারের ছেলে নিপু এবং অপুর সাথে আলাপ প্রসংগে জানাযায় তাদের সাথেও আবহাওয়া অফিসের সীমানা নিয়ে জটিলতা আছে তারপরও জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে তারা সকল সিদ্ধান্তই মেনে নিতে প্রস্তুুত। তারা বলেন দীর্ঘ দিন ধরে এই রাস্তার কোন সংস্কার না হওয়ায় আমরা যারা এ পাড়ায় বসবাসরত আছি তারা খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। তাই আমাদের পক্ষ থেকে যা কিছু করনীয় আছে আমরা তা করতে রাজি আছি।
এলাকার আরেক বাসিন্দা বর্তমান সরকারের যুগ্ন সচিব জনাব নাজমুল হক রাস্তা সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে অনেকটা অগ্রসর হয়েছিল এবং এলাকাবাসীর কে জানিয়ে ছিলো কিছু দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। কোন এক অজানা কারণে ৬ -৭ মাস অতিবাহিত হলেও কোন অগ্রগতি শুনা যাচ্ছে না।
চাঁদপুর পৌর প্রশাসক গোলাম জাকারিয়া বলেন,আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পৌরসভার নিজস্ব ফান্ড না থাকা সত্বেও পৌর বাসীদের চলাচলের সুবিধার্থে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক গুলো মেরামতের ব্যাবস্থা করেছি। পৌরসভার দুটি প্রকল্পের মধ্যে একটি এসেছে চর একটি আসলেই বাকী কাজ গুলে করা সম্ভব হবে। প্রতাপ সাহা রোডের ব্যাপারে তিনি বলেন সরকারি সম্পত্তি রক্ষা ও জনগনে চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তার উদ্যোগ নিলে অবশ্যই আমরা উভয় পক্ষের সাথে বসে একটা সুষ্ঠ সমাধান করে দিবো।
পরিশেষে বলতে চাই যত দ্রুত সম্ভব সকল পক্ষ বসে একটা সুষ্ঠ সমাধানের মাধ্যমে এলাকার নাগরিকদের দুর্ভোগের কথা চিন্তাকরে দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার না করলে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ ভাবে পৌরসভার সামনে মানব বন্ধন সহ আরো কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।